ENGLISH
- Advertisement -Newspaper WordPress Theme
ছবির গল্পআলোকবর্তিকার এক সকাল

আলোকবর্তিকার এক সকাল

সকালবেলার সূর্য তখনও শহরের ওপর আলতো আলো ছড়াতে শুরু করেনি। রংপুরের এক নিভৃত কমিউনিটি সেন্টারের আঙিনা ধীরে ধীরে আলোয় ভরে উঠছিল মানুষের পদচারণায়। কেউ এসেছেন কলেজ থেকে, কেউ এনজিওতে কাজ করেন, কেউ বা নিজেকে ভিন্ন পরিচয়ে সমাজের চোখ রাঙানির ভেতরেও বাঁচতে শিখেছেন। তাঁদের চোখেমুখে ছিল এক ধরনের কৌতূহল, যেন তাঁরা আজ এমন কিছু শিখবেন যা শুধু তাঁদের নয় বরং সমাজকেও পাল্টাতে পারে।


১৯ মে, সোমবার। দিনটি ছিল এক ব্যতিক্রমী আয়োজনের সাক্ষী। ‘জেন্ডার স্পেকট্রাম, এক্সপ্রেশন ও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক দিনব্যাপী এই সেশনটি আয়োজন করে লাল সবুজ সোসাইটি, সহযোগিতায় ফাউন্ডেশন ফর উইমেন পসিবিলিটিজ (FWP)। উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট—জেন্ডার বৈচিত্র্য এবং লিঙ্গ পরিচয়ের প্রতি সম্মান ও সংবেদনশীলতা গড়ে তোলা, এবং সেইসঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যচর্চার বিষয়টি সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে দেওয়া।


অনুষ্ঠানটি শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানান এফডাব্লিউপি-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর খাদিজা মাহিন। তাঁর কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা, কথায় ছিল আশ্বাস “যে সমাজ ভিন্নতাকে ভয় পায় না, বরং তাকে আলিঙ্গন করে, সেই সমাজই সত্যিকার অর্থে মানবিক সমাজ।”


এরপর মঞ্চে আসেন এফডাব্লিউপি-এর প্রোগ্রাম প্রধান ফারিদা বেগম। তিনি বলেন, “লিঙ্গ পরিচয়ের ভিন্নতা কোনো বাধা নয়, বরং বৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যকেই আমাদের উদযাপন করতে শিখতে হবে।” তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভেতরে লুকানো বৈষম্যের কথা৷ যেখানে লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে অনেকেই সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হন।


সেশনের পরবর্তী অংশে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেন অংশগ্রহণকারীরা। কেউ গ্রুপ আলোচনায় নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন, কেউ রোল-প্লে’র মাধ্যমে বোঝাতে চান একজন ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি কীভাবে প্রতিদিনের স্বাস্থ্যচর্চা বা চিকিৎসা সেবার সময় হেয় প্রতিপন্ন হন।


অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী একজন বলেন, “আমার পরিচয় আমার দুর্বলতা নয়। আমি চাই, আমার বন্ধুরা আমাকে বুঝুক, আমাকে স্বীকার করুক।” আরেকজন তরুণী জানালেন, কীভাবে তিনি স্কুলজীবনে স্রেফ পোশাকের পছন্দের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।


এইসব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শুধুই গল্প নয়, এগুলো সমাজের একান্ত বাস্তবতা এবং এদের আলোচনার সুযোগ করে দেওয়াই ছিল এই সেশনের অন্যতম সাফল্য।


আয়োজকদের মধ্যে লাল সবুজ সোসাইটির রংপুর শাখার সভাপতি সাদিয়া ইয়াসমিন ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি বলেন, “আমরা চাই তরুণ প্রজন্ম এমন এক সমাজ গড়ুক, যেখানে ভালোবাসা, সম্মান আর মানবিকতা সব পরিচয়ের মানুষের জন্য সমানভাবে নিশ্চিত থাকবে।”


দিনের শেষে আয়োজনটি যেন হয়ে উঠেছিল এক বন্ধনময় পরিসর৷ যেখানে কেউ কাউকে বিচার করেনি, বরং শোনার চেষ্টা করেছে। একজন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বললেন, “এই সেশনে অংশ না নিলে আমি হয়তো বুঝতেই পারতাম না, আমাদের সমাজে এখনও কত মানুষ ভয়ে, সংকোচে, আর বঞ্চনায় বেঁচে থাকে।”


আয়োজকেরা জানালেন, এটি একটি সূচনা মাত্র। তাঁরা ভবিষ্যতে রংপুর ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এমন কর্মশালার আয়োজন করতে চান, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণেরাও জেন্ডার বৈচিত্র্য ও স্বাস্থ্যবিধির মতো বিষয়গুলো নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে শেখে।


এই পরিবর্তনের যাত্রা যেন থেমে না যায়- এই চাওয়া, এই আশায় চোখ রাখি আগামীর দিকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমরা খুঁজছি তোমাকেই

তুমি কি ভিডিও বানাও? লেখালেখি ভালোবাসো? ছবি তুলতে ভালো লাগে? তোমার চোখে দেখা বাস্তবতাই বদলে দিতে পারে সমাজের চিত্র। এখনই আবেদন করো লাল সবুজ প্রকাশ-এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য

ক্লিক করো এখানে

বিশেষ প্রতিবেদন ⇢

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme

সর্বশেষ প্রতিবেদন

More article

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme