পড়া খেলার নতুন সুর, যাই চলো যাই সিসিমপুর। হালুম, টুকটুকি, ইকরি কিংবা শিকু- আমাদের দেশের শিশুদের কাছে নামগুলো অতি পরিচিত এবং অতি প্রিয়। বলছি, জনপ্রিয় শিশুতোষ সিরিজ সিমিমপুরের কথা। দেশের শিশুদের শেখাকে আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য করার লক্ষ্য নিয়ে সিসিমপুর নামে যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি চালু হয়েছিল তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। যার কম করে হলেও বয়স পেরিয়েছে ১৫ টি।
এটি মূলত আমেরিকান অনুষ্ঠান ‘সিসামি স্ট্রিট’ এর বাংলাদেশি সংস্করণ, ‘চলছে গাড়ি সিসিমপুরে“। অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা ও কনটেন্ট ডেভেলপমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছিল ‘সিসামি ওয়ার্কশপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান । যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দাতা প্রতিষ্ঠান ‘ইউএসএইডে’র অর্থায়নে সিসিমপুর ইতিমধ্যে প্রচার করেছে ১২টি সিজন, যাতে ৭০০টি পর্ব ছিল। শুরুতে কেবল বিটিভির পর্দায় দেখা যেত।
সিসিমপুর সম্প্রচার শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এক হিসেবে উঠে এসেছে, শুধু বাংলাদেশ টেলিভিশনেই প্রতি সপ্তাহে দেশের প্রায় এক কোটি দর্শক অনুষ্ঠানটি দেখে থাকেন। বর্তমান সময়ে হাজার খানেক কার্টুন থাকলেও একইসাথে শিক্ষামূলক ও বিনোদনমূলক কার্টুন হয়তো পাওয়া যাবে না।কিন্তু, সিসিমপুর ছিলো তেমনই একটি কার্টুন, যা শিশুদের আনন্দ দেয়ার পাশাপাশি তাদের মস্তিষ্ককে করেছে বিকশিত।
২০০৭ সালে পরিচালিত এসিপিআর এর একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু সিসিমপুর অনুষ্ঠানটি নিয়মিত দেখে তারা তাদের চাইতে এক বছরের বড় শিশু, যারা সিসিমপুর দেখে না তাদের চেয়ে ভাষা ও বর্ণ, গণিত এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ে বেশি দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। ২০১০ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট পরিচালিত একটি জরিপে সিসিমপুর শিশুতোষ অনুষ্ঠান হিসেবে শীর্ষস্থানীয় এবং সামগ্রিকভাবে তৃতীয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়েছে।
সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ তার সকল কার্যক্রমই সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে যৌথভাবে পরিচালনা করে থাকে। গত চৌদ্দ বছরে সিসিমপুর বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সাথে যৌথভাবে কাজ করেছে। ইউএসএআইডি এর অর্থায়নে সিসিমপুর-এর পথচলার শুরু।
নিউইয়র্কভিত্তিক সিসেমি স্ট্রিট নামক শিক্ষামূলক টেলিভিশন ধারাবাহিকের যৌথ-প্রযোজনা সিসিমপুর-এর কার্যক্রম বাংলাদেশে পরিচালনা করছে সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ। বর্তমানে সিসিমপুরের রয়েছে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও, যেটি ‘এখানেই সিসিমপুর’ নামে গুগল প্লেস্টোরে পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি কখন, কোন চ্যানেলে প্রচারিত হবে ইত্যাকার তথ্য পাওয়া যাবে। অ্যাপটিতে শিশুদের স্বাস্থ্য, সচেতনতা ও শিক্ষা সম্পর্কিত টিপস জানা ছাড়াও বিভিন্ন রকমের ভিডিও গেম ও বই কেনার সুবিধা থাকছে। তবে একটা, দুটো দিয়ে হবে না, শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে এমন শিশুতোষ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান আরো হওয়া চাই।