জহিরুল ইসলাম (পটুয়াখালী)
বর্তমানে ডেঙ্গু বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এডিস মশাবাহিত এই ভাইরাসজনিত রোগটি বর্ষাকালে বেশি ছড়ালেও বর্তমানে প্রায় সারা বছর ধরেই এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অনেক সময় গুরুতর জটিলতার দিকে চলে যেতে পারে, তাই প্রাথমিক পর্যায়ে সতর্কতা, প্রতিরোধ ও যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে বাউফলের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. দিলিপ চন্দ্র বলেন, “শিশুর ডেঙ্গু হলে বাবা-মা প্রথমে ভয় না পেয়ে সচেতনভাবে লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করবেন। ডেঙ্গু সাধারণত তিনটি পর্যায়ে দেখা যায়—ফেব্রাইল (জ্বরের) পর্যায়, ক্রিটিক্যাল (অ্যাফেব্রাইল) পর্যায় এবং কনভালসেন্ট পর্যায়। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হলো জ্বর কমে যাওয়ার পরের দুই-তিন দিন। এ সময় শিশুর শরীরে প্লাজমা লিকেজ হতে পারে, পেট ফুলে যেতে পারে কিংবা শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে।”
শিশুদের মধ্যে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা হলো: মাথাব্যথা, চোখ লাল হওয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খেতে না চাওয়া, লালচে র্যাশ এবং ছয় থেকে আট ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। সাধারণত চিকিৎসকরা সিবিসি, ডেঙ্গু এনএস১ অ্যান্টিজেন এবং লিভার ফাংশন পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। জ্বর থাকলে শিশুর শরীর স্পঞ্জ করে ঠান্ডা রাখতে হবে এবং তরল খাবার বেশি খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের জুস ও মায়ের বুকের দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জ্বরের জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল ব্যবহার করা নিরাপদ, অন্য কোনও ওষুধ না দেওয়াই ভালো।
ডা. দিলিপ আরও বলেন, “শিশুর রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা যদি অতিরিক্ত কমে যায়, বিশেষ করে ১০ হাজারের নিচে নেমে আসে বা রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। অনেক সময় প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাই রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে রক্তদাতা প্রস্তুত রাখা জরুরি।”
তবে চিকিৎসার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ডেঙ্গুর প্রতিরোধ। এ বিষয়ে অভিভাবকদের যত্নবান হতে হবে। ঘরের ভেতর ও বাইরে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে নজর রাখা উচিত। ফ্রিজ, এসি, ফুলের টব, ব্যবহৃত টায়ার বা ডাবের খোলায় জমে থাকা পানি নিয়মিত ফেলে দিতে হবে। শিশুদের ফুলহাতা জামা-প্যান্ট পরাতে হবে এবং দিনে-রাতে মশারির মধ্যে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতকদের সার্বক্ষণিক মশারির মধ্যে রাখা উচিত। ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় শিশুদের শরীরে মশা নিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তা শিশুদের ত্বকের জন্য নিরাপদ কিনা তা দেখে নেওয়া প্রয়োজন।
পরিবারের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদেরও ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং শিশুর জ্বর হলে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোই হতে পারে শিশুর জীবন বাঁচানোর বড় উপায়। কারণ, অনেক সময় দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় শিশুর শারীরিক অবস্থা জটিল হয়ে যায়।