জি এম বাইজিদ (পটুয়াখালী প্রতিনিধি)
বর্তমান যুগে ইন্টারনেট শিশুদের জীবনে যেমন নতুন জ্ঞানের দুয়ার খুলে দিচ্ছে, তেমনি অতি ব্যবহার অনেক সময় হয়ে উঠছে ক্ষতির কারণ। ভালোভাবে ব্যবহৃত হলে ইন্টারনেট হতে পারে শিক্ষার সহায়ক একটি বড় মাধ্যম; কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে গেলে তা শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে—এমনটাই মনে করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
ইউনিসেফের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের শিশুদের বড় একটি অংশ ইন্টারনেটে প্রতিদিন গড়ে ৪ ঘণ্টার বেশি সময় কাটায়। তারা সময় কাটায় মোবাইল, ট্যাব কিংবা কম্পিউটারের স্ক্রিনে। তাদের প্রধান অনলাইন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১২ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী জানায়, “মোবাইলে কার্টুন না দেখলে আমার খেতে ইচ্ছা করে না। মা–বাবা অনেক বোঝায়, কিন্তু মন মানে না। আমি ফোন ছাড়া থাকতে পারি না।রাতে ঘুমানোর আগে ফোন না টিপলে আমার ঘুম আসে না।” তার এই নির্ভরতা সমাজে শিশুদের মধ্যে প্রযুক্তি আসক্তির ভয়াবহতা তুলে ধরে।
একজন অভিভাবক বললেন, “আমার মেয়ে সব সময় মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। বাইরে খেলতে যেতে চায় না, পড়াশোনাও ঠিকমতো করে না। এমনকি ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও মোবাইল ছাড়ে না। এতে ওর স্বাভাবিক জীবন আর আচরণে অনেক সমস্যা হচ্ছে।”
পটুয়াখালীর ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুরাইয়া আক্তার বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী এখন ক্লাসে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না। রাতে মোবাইলে গেম খেলে সকালে ক্লান্ত হয়ে আসে।অনেকে তো মোবাইল নিয়ে স্কুলেও আসে ।তাদের ব্যাবহার আচার আচরণে অনেক টা পরিবর্তন এসেছে ।তারা রুক্ষ মেজাজ এর হয়ে যাচ্ছে ।এতে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. জিন টুয়েঞ্জ তাঁর বই ‘iGen’-এ শিশুদের মধ্যে স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বইটিতে তিনি লেখেন— “যত বেশি সময় শিশুরা স্ক্রিনের সামনে কাটায়, তত বেশি তারা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশায় ভোগে। অনলাইন সংযোগ তাদের বাস্তব জীবনের সংযোগ কমিয়ে দেয়।
ড. টুয়েঞ্জ তার গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন- স্ক্রিন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে এবং বিকল্পে বাস্তব জীবনের সম্পর্ক ও অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে।