জি এম বাইজিদ:
পটুয়াখালীর নদীপাড়ের অনেক গ্রামে শিশুদের জীবনের প্রতিটি দিন যেন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে শুরু ও শেষ হয়। নদীঘেঁষা বসতঘর, খোলা পাড়, নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা—এসবই প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে তুলছে শিশুদের ঝুঁকি। সামান্য অসাবধানতায় খেলতে গিয়ে নদীতে পড়ে শিশুর মৃত্যু যেন এখন আর বিরল ঘটনা নয়।
চলতি বছর জেলার কলাপাড়া, দশমিনা ও সদরে অন্তত তিনটি শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যার প্রত্যেকটিই নদীতে ডুবে যাওয়ার কারণে। স্থানীয় অভিভাবকরা বলছেন, শিশুদের সুরক্ষার জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাই নেই।
পটুয়াখালীর কাঠপট্টি এলাকার বাসিন্দা শারমিন বেগম বলেন, “নদী আমাদের ঘরের একদম পেছনে। আমার ছোট ছেলে একদিন পিছলে পড়ে যাচ্ছিল, আমি না থাকলে হয়তো তাকে হারাতাম। এখানে কোনো সুরক্ষা নেই। আমরা গরিব মানুষ, কোথায় যাব?”
নদীপাড়ের এই বাস্তবতা শুধু পটুয়াখালীতেই নয়, বরং পুরো বাংলাদেশেই এক বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরে।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (UNICEF) এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে এত মানুষ প্রাণ হারায়, এটি হৃদয়বিদারক। আমরা জানি যে এসব মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রতিটি শিশুর ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যক্তি, কমিউনিটি ও সরকারের প্রতি আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর পানিতে ডুবে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বাংলাদেশে প্রতিবছর বন্যার কারণে বহু এলাকা প্লাবিত হয়, এবং সচেতনতার অভাব ও সাঁতার না জানার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়।
‘লাল সবুজ সোসাইটি’র এক প্রতিনিধি মো: ইস্রাফিল বলেন, “নদীপাড়ের শিশুরা প্রতিদিন যে ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে, তা চোখে দেখা যায় কিন্তু অনেকে গুরুত্ব দেয় না। আমরা শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছি, কিন্তু এসব এলাকাকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। অভিভাবক সচেতনতা, স্থানীয় সহযোগিতা ও সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যা সমাধান হবে না।”
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি শিশুর নিরাপদ জীবনযাপনের অধিকার আছে। আর তা নিশ্চিত করতে হলে এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, অবকাঠামোগত নিরাপত্তা এবং শিশুদের জন্য সাঁতার শেখার সুযোগ সম্প্রসারণ।