ENGLISH
- Advertisement -Newspaper WordPress Theme
পরিবেশ ও জলবায়ুউপকূলআশ্রয়কেন্দ্রে আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় মানসিক চাপে শিশুরা

আশ্রয়কেন্দ্রে আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় মানসিক চাপে শিশুরা

প্রতিবেদক লাল সবুজ প্রকাশ:

প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় হাজারো মানুষ সরকারি ও বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। কিন্তু এসব কেন্দ্রে শিশুদের জন্য নেই কোনো আলাদা স্থান। নেই নিরাপদ টয়লেট কিংবা প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা। এতে করে দুর্যোগের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার ৫৬-নং পশ্চিম ভায়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানে দেখা গেছে, একটি কক্ষে ৮০-৯০ জন মানুষ একসঙ্গে অবস্থান করেন। শিশুরা সেখানে নিরাপদ নয়; নেই আলাদা টয়লেট বা বিশ্রামের সুযোগ।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গাদাগাদি করে থাকতে হয়, যেখানে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিশুরা নারীদের সঙ্গে একত্রে অবস্থান করলেও সঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না, বিশ্রাম পায় না এবং মানসিক প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত হয়।

অধিকাংশ কেন্দ্রে সাধারণ টয়লেট ব্যবস্থায় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে। এমনকি যৌন সহিংসতার আশঙ্কাও থেকে যায়।

এছাড়া, কোনো প্রকার মানসিক সহায়তা বা প্রাথমিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরা হতাশা, দুশ্চিন্তা ও ভয়াবহ স্মৃতিতে নিমজ্জিত থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে বন্দী অবস্থায় থাকা শিশুদের মাঝে তৈরি হয় দিশেহারা ভাব। খেলাধুলা, গল্প বলা, ছবি আঁকা কিংবা মনোবিনোদনের কোনো ব্যবস্থাও থাকে না। অথচ, স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে এমন কার্যক্রম চালু করা গেলে শিশুদের জন্য তা অনেক সহায়ক হতে পারত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্যোগকালীন সময় শিশুদের জন্য শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও বড় ধরনের চাপ তৈরি করে। আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতা থেকে জন্ম নেয় দীর্ঘমেয়াদী মানসিক আঘাত।

তিন শিশুর মা সামছুন্নাহার বেগম (৩২) বলেন, “ঝড়ের সময় শুধু মাথা বাঁচালেই হয় না। বাচ্চাগুলা কাঁদে, ভয় পায়। ছোটটা তো দুই দিন কথা বলেনি।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মিয়া (৪৮) বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্র আছে, কিন্তু সেগুলো শিশুদের জন্য উপযোগী না। আলাদা জায়গা, স্বাস্থ্যসেবা বা মানসিক সহায়তা কিছুই নেই। দুর্যোগের সময় শিশুরা শুধু খাদ্যের অভাবে নয়, নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক ভয়ের মধ্যেও পড়ে।”

সাইকোলজিস্ট ডাঃ শারমিন সেতু বলেন, “দুর্যোগকালীন সময়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে আলাদা শিশুবান্ধব স্থান, প্রাথমিক কাউন্সেলিং এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে খেলাধুলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে এই শিশুরা ভবিষ্যতে মানসিকভাবে গুরুতর সমস্যায় পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “আশ্রয়কেন্দ্রে শিশুদের জন্য আলাদা নিরাপদ কক্ষ বরাদ্দ, মহিলা ও শিশুবান্ধব টয়লেটের স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত মনোবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে মানসিক সেবা, স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে গল্প বলা, আঁকা ও খেলাধুলার আয়োজন, এবং বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য ও ওষুধের নিশ্চয়তা—এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতেই হবে।”

একটি সমাজের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুরা কতটা সুস্থ ও সুরক্ষিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে শুধু শারীরিক নিরাপত্তা নয়, মানসিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে না পারলে আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। তাইতো নিরাপদ আশ্রয়ের থেকেও বেশি দরকার শিশুবান্ধব সুরক্ষা পরিকল্পনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমরা খুঁজছি তোমাকেই

তুমি কি ভিডিও বানাও? লেখালেখি ভালোবাসো? ছবি তুলতে ভালো লাগে? তোমার চোখে দেখা বাস্তবতাই বদলে দিতে পারে সমাজের চিত্র। এখনই আবেদন করো লাল সবুজ প্রকাশ-এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য

ক্লিক করো এখানে

বিশেষ প্রতিবেদন ⇢

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme

সর্বশেষ প্রতিবেদন

More article

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme