পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সহিংসতা, শোষণ ও অবহেলার মতো ভয়াবহ চিত্র প্রতিদিনের বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জনই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার—এবং তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় পরিবারের সদস্য বা শিক্ষকের দ্বারা।
পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলার খোঁজখবর থেকে জানা যায়, অনেক শিশুই চায়ের দোকান, ইটভাটা কিংবা বাসাবাড়িতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া অভিভাবকরা দারিদ্র্যের চাপে পড়ে মেয়েদের অপ্রাপ্তবয়স্ক বয়সেই বিয়ে দিচ্ছেন, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
একইসাথে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পথশিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুরা। জেলা সদরের একটি সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “অনেক শিশু স্কুলে আসছে, কিন্তু তাদের মানসিক অবস্থা এমন যে তারা পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারে না। কারণ, ঘরে কিংবা কর্মস্থলে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।”
ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৭ শতাংশ শিশু শিশুশ্রমে নিয়োজিত। এই হার পটুয়াখালীতেও উদ্বেগজনক। এছাড়াও, ১৮ বছরের নিচে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। ফলে তারা অপুষ্টি, মাতৃত্বজনিত জটিলতা, শিক্ষা থেকে ঝরে পড়াসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে।
জেলার একাধিক সমাজকর্মী মনে করছেন, জন্মনিবন্ধনের অনুপস্থিতি, পরিবারে সচেতনতার অভাব এবং সামাজিক প্রথার কারণে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। পটুয়াখালীতে অনেক শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই, ফলে তারা পরিচয়, শিক্ষা ও সুরক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
শিশু সুরক্ষায় ইউনিসেফ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে কাজ করছে:
- শিশু-বান্ধব বিচারব্যবস্থা
- সমাজসেবায় সক্ষমতা বৃদ্ধি
- সহিংসতা ও ক্ষতিকর সামাজিক প্রথা প্রতিরোধে সচেতনতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আইন দিয়ে নয়—পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগেই শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ ও সহানুভূতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।