ENGLISH
- Advertisement -Newspaper WordPress Theme
Uncategorizedনারী ও শিশুর নিরাপদ পরিবেশ জরুরি

নারী ও শিশুর নিরাপদ পরিবেশ জরুরি

অপরাধের নিত্যনতুন ঘটনা সামনে আসছে। সম্প্রতি ধর্ষণ ও নির্যাতন করে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় অনেকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার নারী এবং তাদের পরিবারে বিরূপ প্রভাব তো পড়ছেই, তারা সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারে না। হেয়প্রতিপন্ন হতে হয় প্রতি পদে পদে। পরিবারগুলোর ওপর নেমে আসে নেতিবাচক প্রভাব।

সারা বিশ্ব আজ করোনা মহামারির কবলে। আমরা এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি। মহামারির মতো এই সংকটকালেও থেমে নেই নারী নির্যাতন, ধর্ষণ। কী এক অদ্ভুত সময় পার করছি আমরা? টেলিভিশন বা খবরের কাগজে এ ধরনের চিত্র ঘুরে ফিরে আসছে আর আমাদের কপালে ভাঁজ পড়ছে। শিশু, তরুণী বা বৃদ্ধা কেউই যেন রেহাই পাচ্ছে না। বেপরোয়া হয়ে পড়ছে তরুণদের একটা অংশ। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে?

সম্প্রতি নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধির প্রবণতা আমাদের চিন্তিত করে তুলছে। একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। দুই মাস বয়সের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধা নারী কেউই এ সহিংসতার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এতে অনেকটাই মনে হয় সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর সাফল্যের পেছনে নারীর অগ্রগতি বড় ভূমিকা রাখলেও ঘরের মধ্যে নারীর অবস্থা তেমন বদলায়নি।

মানবাধিকার সংস্থা- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়- গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৫৮৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

অপরাধের নিত্যনতুন ঘটনা সামনে আসছে। সম্প্রতি ধর্ষণ ও নির্যাতন করে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় অনেকে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ ধরনের নির্যাতনের শিকার নারী এবং তাদের পরিবারে বিরূপ প্রভাব তো পড়ছেই, তারা সমাজে মাথা উঁচু করে চলতে পারে না। হেয়প্রতিপন্ন হতে হয় প্রতি পদে পদে। পরিবারগুলোর ওপর নেমে আসে নেতিবাচক প্রভাব।

এদিকে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এবং এমন অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

নতুন ধরনের অপরাধের বেলায় দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব সরকারের। তবে অপরাধের উৎস কোথায় সেটা জানাও জরুরি। এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না কেউ।

শিশুদের বেড়ে উঠতে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি ও সুস্থধারার সমাজ গড়ার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি সব অভিভাবকের। সুস্থ একটি পরিবার থেকেই সুস্থ সমাজ এবং এভাবেই সুষ্ঠু রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে। আমাদের নাগরিকদের তথা অভিভাবকদের পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবর্তী সময়ে সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গড়তে হবে। আমরা যে শিক্ষা বা যে পরিবেশে বড় হয়েছি এখন তা ঢের বদলে গেছে তা বুঝতে হবে। পারিবারিক বন্ধন মধুর হলে সন্তানদের বেপরোয়া হওয়ার সম্ভাবনা কমবে বৈকি! কমে যাবে অপরাধ, শান্তিতে বসবাস করবে শহর-নগর, গ্রামের জনজীবন।

এখনও শিশুকাল থেকেই একজন মেয়েকে শেখানো হয় এভাবে বসতে নেই, ওভাবে চলতে নেই, এটা বলতে নেই, ওটা করতে নেই, যেখানে-সেখানে যেতে নেই, যার তার সঙ্গে মিশতে নেই। তাছাড়া পোশাকের ব্যাপারেতো বরাবরই অভিভাবকের সাবধানতা থাকেই। পাশাপাশি যদি আমরা ছেলে শিশুকেও একই শিক্ষা দেই, তাহলে সমাজের এ ধরনের দুর্ঘটনা কমে যাবে বা এসব ঘটনা না-ও ঘটতে পারত বলে মনে হয় কি?

আবার এমনটাও দেখা যায়, আমরা মেয়ে শিশুদের ওপর অনেক কিছু চাপিয়ে দেই যা সব ক্ষেত্রে সঠিক না। যেমন, মেয়েদেরকে একটা বল কিনে না দিয়ে একটা পুতুল কিনে দেই। বাইরে খেলতে নিয়ে যাই না বা বেড়াতে নিয়ে যেতেও অনীহা থাকে। ফলে দেখা যায়, সব পরিবেশে তাকে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা তৈরিতে বাধা দিচ্ছি সেই ছেলেবেলা থেকেই।

এসব বাধা ডিঙানোর একটা মনোভাব তৈরি হয় কারো কারো বেলায়। আবার কোনো কোনো শিশুর ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে বা কেউ কেউ বিষণ্নতায় ভোগে। এর চেয়ে বরং তাকে ছোট থেকেই পরিবারের প্রতি তার যে দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করতে পারি। সংসারের পুরনো ইতিহাস, তার জন্মের আনন্দময় কোনো মুহূর্তের গল্প, সমাজ বা পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তনের কথা জানাতে পারি।

ছোটদের জন্য তৈরি সিনেমা বা নাটক দেখিয়ে মুক্তমনা একজন নারী হিসেবে গড়ে তোলার কৌশল কিন্তু পরিবার বা অভিভাবকের। এ দায়িত্ব আমাদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং মেয়ে শিশুকে শেখাতে পারি, তোমার ডানায় আগুন, দীর্ঘ হোক তোমার উড়ান।

একই সঙ্গে ছেলে শিশুকেও পারিবারিক বন্ধনের মধ্যে সম্পৃক্ততা রাখা জরুরি। যেমন বাবা তাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে যেতে পারেন। শিশুর পছন্দের কিছু কেনাকাটাকে গুরুত্ব দিতে পারেন। পরিবারের সাধারণ কোনো সিদ্ধান্তে তার ভূমিকাকে প্রধান্য দিতে পারেন। একসঙ্গে সবাই মিলে খাবারের টেবিলে নানা প্রসঙ্গ টেনে একটু হাসি তামাসাও করে পরিবারের বন্ধনে তাকে আকৃষ্ট করতে পারেন।

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব কিন্তু বাবা-মা দুজনেরই। বছরে অন্তত দুই একবার পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়া উচিত। এতে শিশুদের যেমন মানসিকতার বিকাশ হবে, তেমনই ক্লাশের এত এত পড়াশোনার বিরতিতে নিজেদেরকে নতুন করে সতেজতা তৈরিতে সহায়ক হবে।

ছেলেরা অনেক সময় মেয়েদের দোষ খোঁজে আবার যখন কোনো বিপদে পড়ে তখন ঠিকই নারীর আঁচলে আশ্রয় নেয়। হয়ত মা, বোন, ভাবিই হয়ে ওঠে তাদের পরম আশ্রয়ের কেন্দ্র। এ আশ্রয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তাকে যেমন বোঝাতে হবে তেমনি তার আশ্রয়ের মানুষদেরও উচিত তাকে এভাবে আগলে রাখা।

মাধ্যমিক স্কুল থেকে কলেজ পড়ুয়াদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া জরুরি। কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় খেলছে, মোবাইলে কতক্ষণ সময় কাটাচ্ছে বা এতে তার লেখাপড়ার কতটা ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয় নিয়ে তাকে আদর করে বোঝাতে হবে। এসব ক্ষেত্রে রাগারাগি করলে ফল উলটো হয়। এ বিষয়গুলো বাবা-মাকে উপলব্ধি করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে ভালোভাবে বোঝাপড়া থাকলে সন্তানের উপদেশ দিতে সহজ হবে। পরিবারের অভিভাবকের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকলে তার প্রভাব শিশুর মধ্যে পড়ে। পারিবারিক বন্ধন না থাকলে সে ক্ষেত্রে সুযোগ বুঝে শিশুদের বেপরোয়া জীবন যাপনের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

মহিলা পরিষদের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত মে মাসে ২৪০ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১০৪ কন্যাশিশু ও ১৩৬ জন নারী রয়েছে।

গত ২ জুন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে মে মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৯৫ নারী। এর মধ্যে ৪৫ জন কন্যাশিশু। এর আগের বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের ১১ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৬৮৬ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ১৩টি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ তথ্য জানায়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ দেখা যায় যদি কোনো ব্যক্তি মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ (২০১২ সালের ৩ নং আইন) এর ধারা ৩ ও ৬-এ উল্লিখিত কোনো অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কোনো নারী বা শিশুকে অপহরণ করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা চৌদ্দ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন।

এসব আইন শুধু কাগজে থাকলে চলবে না। এ সম্বন্ধে সকলকে জানানো দরকার, সকলকে সচেতন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে কিছু ধারণা দিলে তারা এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার আগে একটু হলেও চিন্তা করবে।

সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিস্ত্র করে নির্যাতন থেকে শুরু করে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে যৌন নির্যাতন ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রতিটি পরিবার।

উঠতি বয়সের কিছু তরুণী আরো একটু সচ্ছল থাকার জন্য হয়ত পাচারের ভয়ংকর ‘ফাঁদে’ পা দেয়। ‘টিকটক দেশে জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে মেয়েদের স্টার হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এ কাজে নিয়ে যাওয়া হয়।

একদল তরুণ টিকটকে ভিডিও বানানোর কথা বলে কৌশলে ভারতে পাচার করার খবর উঠে আসছে পুলিশের অভিযানে। সেখানে অনেক নারীর দুঃসহ নির্যাতন ও দুর্বিষহ জীবন যাপনের খবর বেরিয়ে আসছে।

ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর খবর হয় এবং ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু এ ধরনের ঘটনার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আরো একটু তৎপরতা দরকার। যদিও তার ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে তাদের বেড়ে ওঠা সন্তানের প্রতি। সরকারের পাশাপাশি সবাই তার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করলে, তবেই একটি সুস্থ সমাজ গড়া সম্ভব।

নারীরা এখন অনেক এগিয়ে। তারা আজ স্বয়ংসিদ্ধা, কারো উপরে নির্ভরশীল নয়। উলটো তাদের ওপরই দাঁড়িয়ে থাকে কোনো কোনো পরিবার। তাদের মেধা, প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ওপরেই নির্ভর করে কোনো দেশের ভাগ্য।

এক্ষেত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-

‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।/বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,/অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।/ নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে/জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে’…

এতেই আমরা বুঝতে পারি প্রায় প্রত্যেক সফল মানুষের পেছনেই রয়েছে একজন নারীর আত্মত্যাগ। যারা সবসময় থেকে যান নেপথ্যে। তাই নারীর প্রতি সহানুভূতি নয়, সম্মান প্রদর্শনেই শ্রেয়।

লেখক: সাংবাদিক-কলাম লেখক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমরা খুঁজছি তোমাকেই

তুমি কি ভিডিও বানাও? লেখালেখি ভালোবাসো? ছবি তুলতে ভালো লাগে? তোমার চোখে দেখা বাস্তবতাই বদলে দিতে পারে সমাজের চিত্র। এখনই আবেদন করো লাল সবুজ প্রকাশ-এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য

ক্লিক করো এখানে

বিশেষ প্রতিবেদন ⇢

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme

সর্বশেষ প্রতিবেদন

More article

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme