ENGLISH
- Advertisement -Newspaper WordPress Theme
পরিবেশ ও জলবায়ুপরিবেশগ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

গ্রামীণ নারীদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

মেয়ে তো বড় হয়েছে, বিয়ে দিয়ে দাও,মেয়েদের বেশি লেখাপড়া করে কি হবে, সময় মত বিয়ে দিয়ে সংসারি বানাও, রান্নাবারা শিখাও, নারীরা শুধু ঘরের কাজ করবে, নারীদের বাইরে যাওয়ার দরকার নাই।’

গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলো তুলে ধরে ও নারীদের প্রতি গ্রামীণ সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টভঙ্গির বর্ণনা করতে গিয়ে নিজ অভিজ্ঞতায় কেঁদে কেঁদে গ্রামীণ নারী দিবসের আলোচনা কথাগুলো বলছিলেন,সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী ফরিদা আক্তার।

তিনি বলেন, ‘নারী উন্নয়নে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি খুবই নিন্নমানের, নারীরা ইচ্ছা করলেই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিবারিক সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সামনে এগুতে পারে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার মতামতের কোন গুরুত্ব নেই। সমাজ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদিও আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যর শিকার হচ্ছেন। গৃহস্থালী কাজসহ গ্রামীণ নারীরা কৃষিকাজের সাথে সরাসরি যুক্ত। গৃহস্থালী কাজ ও নারীদের কৃষি কাজে অবদানের মূল্যায়ন করা হয় না। নারীর গৃহস্থালী কাজকে স্বীকৃতি দেয়া হলে নারীর প্রতি যে বৈষম্য এবং নির্যাতন হয় তার পরিমাণ অনেকাংশে কমে আসবে। তাই জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতিও প্রদান করা জরুরি।’

নারীর গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতী, নারী শ্রমিকের সমমজুরি, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি, নারীর মতামত ও সিদ্ধান্ত পক্রিয়া যুক্ত করা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারীর পুষ্টি, স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তার পাশাপাশি নারীর ঘরে বাইরে রাষ্ট্রীয়ভাবে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর সরকারি বেসরকারি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো নানা আয়োজনে পালন করেন আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস।

তারই ধারাবাহিকতায়, করোনা মোকাবেলায় গ্রামীণ নারীর সক্ষমতা বাঁড়াও প্রতিপাদ্যর আলোকে সিংগাইর উপজেলার জামশা ইউনিয়নের গোলাই কালি গঙ্গা কৃষক কৃষাণি সংগঠন ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বারসিক’র যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের আয়োজন করা হয় গতকাল। আয়োজনের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে মৌন মানব্ন্ধন, সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগম ও সদস্য শিপলু আহমেদ এর করোনা জয়ের গল্প। শিক্ষার্থী ফরিদা আক্তার গ্রামীণ নারী দিবস পালনের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্যরের আলোকে তৈরিকৃত ধারণাপত্র পাঠের মাধ্যমে সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগমের সভাপতিত্বে শাহীনুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সদস্য ভানু বেগম লাইলী বেগম, কুলসুম বেগম, মনোয়ারা বেগম, বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাস প্রমুখ।

এছাড়াও করোনাকালীন সময়ে নারীদের পুষ্টি স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা, ও সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপি নারী নির্যাতনরোধে ও নারীর নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী ফরিদা আক্তার,বৃষ্টি আক্তার, বারসিক কর্মকতা শারমিন আক্তার প্রমুখ।

করোনা জয়ের গল্পে গ্রামীণ নারীদের অবদান তুলে ধরে সংগঠনের সভাপতি সেলিনা বেগম বলেন, ‘দেশের আজকের বিশ্বখ্যাতি অর্জনের পেছনে গ্রামীণ নারীর রয়েছে অনেক অর্জন । যদিও গ্রামীণ নারী এখনো অবহেলা ও নিপীড়নের শিকার। শুধু বর্তমানেই নয়, যুগ যুগ ধরে গ্রামীণ নারী গৃহকর্ম ও কৃষিকর্মে শুধু শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষিতে নারীরা বীজ সংরক্ষণ; বীজ বাছাই, বীজতলায় বীজ বপন, চারা তোলা, চারা রোপণ, পুষ্টিসম্মত রান্না, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, শস্য সংরক্ষণ, কৃষি উৎপাদন পরিকল্পনা, কৃষি শ্রমিক ব্যবস্থাপনা, জৈবকৃষি, হাঁস মুরগি পালন ছাগল পালন, গরু পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে শাকসবজি চাষ নারীরাই করে থাকেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে এ ধরনের কাজ প্রতিদিনই করে থাকেন গ্রামীণ নারীরা। করোনাকালে লকডাউন থাকলেও বসেছিলেনা গ্রামের নারীরা। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও পারিবারিক পুষ্টির যোগান দিতে গিয়েই অনেক গ্রামীণ নারী করোনা শনাক্ত হয়েছেন। তাই গ্রামীণ নারীদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমিও একজন করোনা শনাক্ত রোগী ছিলাম। আমি করোনা মোকাবেলায় সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলেছি, বারসিক আমাকে সব সময় মানসিক সাহস ও নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছে। করোনা কে ভয় না পেয়ে সচেতন থেকে, ভিটামিন সিযুক্ত খাবার, সবুজ শাকসবজি, গরম পানির ভাপ, আদা, লবঙ্গ, লেবু পানি, পুষ্টিকর খাবার, ১৪ দিন সঙ্গনিরোধ থেকে সরকারি স্বাস্থ্য বিধি মেনে করোনা জয় করার চেষ্টা করেছি। তাছাড়া করোনা সচেতনতায় পারিবারিক সহায়তা ও সামাজিক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়মিত মাস্ক পড়া ও শারিরীক দুরত্ব বজায় রেখে করোনা মোকাবেলা সম্ভব।‘

বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে খাদ্য নিরাপত্তা একটি আবশ্যক ধারা যা চলমান রেখেছেন বাংলার গ্রামীণ নারীরা। বাংলাদেশে গ্রামীণ নারী কৃষকদের এই অবদান যে কেবলমাত্র খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে তা নয়। কৃষি উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় নিশ্চিত করতে নারীরা একাধারে খাদ্য উৎপাদক, বীজ ও লোকায়ত জ্ঞান সংরক্ষক, কৃষি শ্রমিক একই সাথে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্রাণবৈচিত্র্যও সংরক্ষণ করেন। নারীদের এই উদ্যোগুলোকে আরো বেগবান করতে নারীদের সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। নারী নিপীড়ন, নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্য বিয়ে রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমরা খুঁজছি তোমাকেই

তুমি কি ভিডিও বানাও? লেখালেখি ভালোবাসো? ছবি তুলতে ভালো লাগে? তোমার চোখে দেখা বাস্তবতাই বদলে দিতে পারে সমাজের চিত্র। এখনই আবেদন করো লাল সবুজ প্রকাশ-এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য

ক্লিক করো এখানে

বিশেষ প্রতিবেদন ⇢

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme

সর্বশেষ প্রতিবেদন

More article

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme