ENGLISH
- Advertisement -Newspaper WordPress Theme
প্রতিবেদনPCOS? নিজের অজান্তেই ভুগছেন না তো?

PCOS? নিজের অজান্তেই ভুগছেন না তো?

জিনিয়া সুলতানা: 

PCOS আসলে কি? এটি হলো একটি স্ত্রীরোগ যাকে Polycystic Ovary Syndrome বলে, অনেকে এটাকে বলেন PCOD অর্থাৎ Polycystic Ovary Diease। মেয়েদের প্রতিমাসে ওভুলেশান হয়ে থাকে। PCOS রোগে আক্রান্ত নারীদের আল্ট্রাসাউন্ডে দেখা যায় ডিম্বাশয়ে মুক্তার মালার মত দেখতে ছোট ছোট ডিম যা জমে থাকে ও এস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণ করে। এতে করে মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত এমনকি বন্ধ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই হরমোনের আধিক্যের ফলে শরীরে ইনসুলিন কাজ করতে পারে না। এর দরুন অতিরিক্ত গ্লুকোজ এর উপস্থিতিতে শরীরে চর্বি জমে ও ওজন বাড়ে। শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয় যার ফলে অনেক নারী মূল কারণ না জেনেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে লেজারের শরণাপন্ন হন। 

WHO এর তথ্য মতে, PCOS  প্রজননে সক্ষম, এমন প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে ৬ থেকে ১৩ জনের মধ্যে দেখা যায়। তবে, সারা পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত প্রায় ৭০ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে রোগ সনাক্তকরণ অপরিক্ষিতই রয়ে যায়।

কারা ঝুকিঁতে আছেন? যেসকল মেয়েদের মাসিক শুরু হয়েছে এমন থেকে মেনোপজ পর্যন্ত বয়সে হতে পারে। 

লক্ষণসমুহ: 

  • অনিয়মিত মাসিক।
  • ওজন বেড়ে যাওয়া।
  •  শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ এর উদ্ভব।
  • অবাঞ্ছিত লোম।
  • আকস্মিকভাবে গায়ের রঙ এ পরিবর্তন। 
  • ত্বকে ব্রনের আধিক্য।
  • উদ্বেগ।
  • অপর্যাপ্ত ঘুম। 
  • মুড সুইং।
  • বিবাহিতদের ক্ষেত্রে, বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা।

কারণ সমূহ:

কারণ এখনো অজানা, কিন্তু রোগটি হরমোনাল হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে, মা-খালা ইত্যাদি সদস্যগণের যদি রোগটি থেকে  থাকে তাহলে বংশগতভাবে রোগটি হবার সম্ভাবনা থাকে। 

 রোগ নির্ণয়ের উপায়সমুহ:

সাধারণত উপরোক্ত লক্ষণসমূহ যদি দেখা দেয়, তাহলে বিশেষজ্ঞগণ আলট্রাসনোগ্রাফি, ল্যাপরোস্কোপি, টেস্টারন, থাইরয়েড ও প্রোল্যাকটিন পরীক্ষা এবং এই রোগ সংক্রান্ত নানাবিধ পরীক্ষা করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

প্রতিরোধ এবং প্রতিকার: 

পঙ্গু হাসপাতালের একজন তরুণ চিকিৎসক সৈয়দা সাইকা সরোয়ার এর মতে, একজন নারী নিয়ম পূর্ণ জীবনযাপন করলেও  এ রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। এক্ষেত্রে হরমোনের ভূমিকা ব্যাপক। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। যদি কোন নারী আক্রান্ত হন, সেই ক্ষেত্রে প্রতিকার এর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

প্রথমত, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সুষম খাদ্য পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। কেন না, ওজন কমালে এই রোগটি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে এসে পড়ে। এক্ষেত্রে, খাদ্যভ্যাসে কার্বনেটেড ব্যভারেজ, ফাস্টফুড এবং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট পূর্ণ খাবার, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত লবণ কিংবা চিনি পূর্ণ খাবার কমাতে হবে। সুষম খাবার যেমন:  লাল চাল বা লাল আটা, রঙিন সবজি ও ফলসমূহ, প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ বিশেষত সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ গ্রহণ করতে হবে। লাল মাংস সীমিতপরিমাণে, গ্রহণ করা উচিত। মাটির নিচের সবজি, প্রসেস করা খাবার এবং বেকারির খাদ্য পরিমিত হারে গ্রহণ করতে হবে। গ্রিন টি পান করা যায়। সরাসরি ভাবে গরুর দুধ, চাষকৃত মাছ এবং পোল্ট্রি ফার্মের মুরগি, ইত্যাদি, খাদ্য, গ্রহণে, সচেতন হতে হবে।

সাত থেকে আট ঘন্টা পর্যাপ্ত ঘুমের কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম করা বাঞ্ছনীয়। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। বাদাম, অলিভ অয়েল, ইত্যাদি পুষ্টিকর খাদ্য খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। আমরা জানি, পালং শাক, ফুলকপি,  বাঁধাকপি ইত্যাদি খাদ্য ফলিক এসিডের অন্যতম উৎস। এছাড়াও মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাদ্যতে ভিটামিন ১২ পাওয়া যায়। হিমোগ্লোবিন কমে গেলে, লাল শাক, কচু, কলিজা খেলে আয়রন পাওয়া যায়। তৈলাক্ত মাছে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রয়োজনীয় ক্যালোরি অনুযায়ী প্রতিদিনের খাবারকে সুষম ভাবে বন্টন করে নিতে হবে। খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। যেহেতু, এ সময় মেটাবলিজম কমে যায়, সেহেতু, ডিটক্স পানি তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে কুসুম গরম পানির সাথে লেবু, পুদিনা, আদা এবং জিরা মিশিয়ে পান করা যায়।

অনেকেই এ সময় এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কিটো ডায়েট অনুসরণ করেন। এটি, ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ নিতে হবে। 

একজন দক্ষ গাইনোকোলজিস্ট এর পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অনেক চিকিৎসক  এন্টিবায়োটিক ও হরমোনাল ঔষধ সহ ওরাল পিলের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে যাতে হাইড্রেটেড থাকা যায়।

এই গেল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ। এখন জেনে নেওয়া যাক চিকিৎসকদের মতামত।  

চিকিৎসক সৈয়দা সাইকা সরোয়ার আরো বলেন, PCOS  পূর্ব এবং পরবর্তী চিকিৎসায় তারতম্য রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগটিকে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয়, ঔষধ, গ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা, সম্ভব হতে পারে কিন্তু PCOS পরবর্তী সময়ে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন সি সেকশন। এই রোগটিকে, সম্পূর্ণরূপে প্রতিকার করা দুরূহ ব্যাপার হতে পারে। কেননা, PCOS থেকে হতে পারে নানাবিধ জটিল রোগ। যেমন ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের সমস্যা, ওবেসিটি, হাইপার টেনশন, এমন কি বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। 

যথাসময়ে সঠিক পথ অনুসরণ না করলে রোগটি জটিল রূপ ধারণ করতে পারে যা শরীরের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। 

সচেতনভাবে জীবন আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। উদ্বেগমুক্ত জীবন এক্ষেত্রে  ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ইয়োগা,  মেডিটেশন, ও ভালো চিন্তা, এক্ষেত্রে অন্যতম পাথেয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

আমরা খুঁজছি তোমাকেই

তুমি কি ভিডিও বানাও? লেখালেখি ভালোবাসো? ছবি তুলতে ভালো লাগে? তোমার চোখে দেখা বাস্তবতাই বদলে দিতে পারে সমাজের চিত্র। এখনই আবেদন করো লাল সবুজ প্রকাশ-এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য

ক্লিক করো এখানে

বিশেষ প্রতিবেদন ⇢

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme

সর্বশেষ প্রতিবেদন

More article

- Advertisement -Newspaper WordPress Theme