

ঢাকার জলাশয় বাঁচলেই ঢাকা বাঁচবে, জলাধার পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ঢাকার খালগুলো উদ্ধারে যে কাজ শুরু হয়েছে; তার সুফল পাচ্ছে ঢাকাবাসী। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারে ভরা বর্ষা মৌসুমেও ঢাকার জলাবদ্ধতা কম ছিল। আমরা ঢাকার জেলা প্রশাসককে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ঢাকার ৪০টি পুকুর পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি।
আজ শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম (ইউডিজেএফবি) আয়োজিত ‘ঢাকার জলাধার পুনরুদ্ধার: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক নগর সংলাপ এবং বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এবারের বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ডে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬ জন সাংবাদিক পুরস্কৃত করা হয়।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, যখন জনগণের সচেতন থাকে, একতাবদ্ধ থাকে তাহলে জলাধার রক্ষা কঠিন কিছু নয়। আমরা দেখেছি, ভোলাগঞ্জের পাথর চুরির বিরুদ্ধে জনগণের একতাবদ্ধের কারনেই আমরা তা ঠেকাতে পেরেছিলাম। মূল্যবোধের জায়গায় আমরা কাজ করছি। কিন্তু, লিগ্যাসিতে আমরা পিছিয়ে আছি।
উপদেষ্টা ঢাকার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) বিষয়ে বলেন, ড্যাপে সাধারণ জলাশয় বলে কিছু থাকবে না। জলাশয় মানেই জলাশয়। আমরা ড্যাপ সংশোধন করে জলাশয়ে কোনো প্রকারভেদ রাখিনি এবং কোনোভাবেই জলাশয় ভরাট করা যাবে না। আমরা হাওর সুরক্ষা আদেশ চূড়ান্ত করলাম৷ হাওরের মধ্যে হাউজবোট কীভাবে চলবে, কৃষি কাজ কিভাবে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ ড. মু. মুসলেহ উদ্দীন হাসান বলেন, রাজধানীর জলাধার উদ্ধার করতে রাজউক ও সিটি করপোরেশন যৌথ উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমি উদ্ধার হয়েছে এবং খাল-নদী দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের অভিযান চলছে। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দখল, পরিকল্পনার ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জলাধার রক্ষায় সরকারি অঙ্গীকার, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জরুরি, নইলে ঢাকার পরিবেশ ও নগর জীবন আরও বিপর্যস্ত হবে।
বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, রাজউকের নিজের কাছেও ঢাকার পুকুরের সঠিক তালিকা নেই। জিআইএস ম্যাপ অনুযায়ী পুকুর, জলাধারের তালিকা করতে হবে। এই তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান, সাবেক পরিবেশ ও নগরায়ণ সম্পাদক, স্থপতি ইনস্টিটিউট বলেন, ড্যাপের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাতে উন্নয়ন করতে চায়, তারা হাউজিং কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দিতে চায়। অপরিকল্পিত নারায়ণকে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে এর মাধ্যমে।
এছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল্লাহ, ইউএনডিপির প্রোজেক্ট ম্যানেজার ইয়ুগেশ প্রাধানাং, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি অমিতোষ পাল, সংগঠনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ হেলিমুল আলম প্রমুখ।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান করেন অতিথিরা। এবারে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ডে ৫টি ক্যাটাগরিতে ৬ জন সংবাদকর্মীকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।