Home সব খবর চোখের পলকেই রং বদলায় গিরগিটি

চোখের পলকেই রং বদলায় গিরগিটি

0

ক্যামেলিয়ন বা গিরগিটি নামটা একটু অদ্ভুত হলেও বাস্তবে বিস্ময়কর প্রাণী এটি। চোখের পলকে নিজের রং বদলে পরিবেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। মূলত শিকারি থেকে বাঁচতে নিজের শরীরের এমন বিবর্তন ঘটায়। বিপদের আঁচ পেলেই মুহূর্তের মধ্যেই সবুজ, হলুদ, নীল রঙে নিজেকে পাল্টে ফেলে গিরগিটি। আবার শিকার করার সময় নিজেকে আড়ালে রাখতে একই পথ বেছে নেয় এরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে চোখের পলকে রং বদলায় গিরগিটি?
উত্তরটি রয়েছে গিরগিটির ত্বকের ভেতর। এদের ত্বকে উপস্থিত কোষে বিভিন্ন রঙিন কণা থাকে। এরা নিজেদের চারপাশের রং অনুসারে নির্দিষ্ট রঙের কণা কোষের সবখানে ছড়িয়ে দেয়। ফলে গিরগিটির শরীরের রং চারপাশের পরিবেশের কণার রং ধারণ করে। ফলে শিকার বা শারির পক্ষে এটিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। গিরগিটির এই রং পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে বাড়তি সুবিধা দেয়। এই বিচিত্র ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এরা পেয়েছে।
গিরগিটির ত্বকে ক্রোমাটোফোর নামের বিশেষ কোষ থাকে। এই কোষে একপ্রকার রঞ্জক পদার্থ থাকে, যাকে মেলানন বে মলানিন বিন্ন রঙর হয়। যেমন হলুদ, কমলা, লাল, বাদামি, নীল ও কালো। ক্রোমাটোফোর কোষের ভেতরে মেলানিন গ্রানুল নামের ছোট ছোট নউক্লয়াস থাকে। যখন গিরগিটি নিরাপদ বোধ করে, তখন এই গ্রানুল কোষের কেন্দ্রে জমা থাকে, ত্বককে হালকা রং দেয়। কিন্তু যখন গিরগিটি বিপদ অনুভব করে, তখন স্নায়ুতন্ত্রের সংকেত ক্রোমাটোফোর কোষকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে মেলানিন গ্রানুল কোষের প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে, ত্বককে গাঢ় রং দেয়। গিরগিটি কেবল বিপদ থেকে রক্ষা পেতেই রং পরিবর্তন করে না; শিকারকে আকর্ষণ করতে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এমনকি একে অপরের সঙ্গে যোগযোগ করতেও রং পরিবর্তন করে। পুরুষ গিরগিটি আধিপত্য প্রদর্শন করার জন্য উজ্জ্বল রং ধারণ করে। প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর জন্য গাঢ় রং ধারণ করে।
গিরগিটির রং পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রকৃতির অভিযোজনের একটি চমৎকার প্রমাণ। এটি গিরগিটিকে পরিবেশে টিকে থাকতে সহায়তা করে। বিশ্বে প্রায় ২০০ প্রজাতির গিরগিটি আছে। গিরগিটি মাদাগাস্কারের স্থানীয়, তবে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতেও দেখতে পাওয়া যা। ১৯০৩ সালে ফ্রাংক কার্লটন নামের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রাণিবিজ্ঞানী গিরগিটির রং পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা প্রকাশ করেন। গিরগিটির রং পরিবর্তনের ক্ষমতা ছাড়াও রয়েছে আরও বিশেষ সক্ষমতা। গিরগিটি মাত্র সেকেন্ডের ২০ ভাগের ১ ভাগ সময়ের মধ্যে লম্বা জিহ্বা বের করে শিকার ধরে। এদের জিহ্বার মাথায় থাকা বিশেষ আঠালো তরল পোকামাকড়কে আটকে ফেলে। গিরগিটির এই আক্রমণ পোকামাকড়ের জন্য প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া গিরগিটির চোখ দুটি অক্ষিকোটর থেকে কিছুটা বাইরের দিকে বের হয়ে থাকে, যা তাদের চারপাশের ৩৬০ ডিগ্রি বা চারপাশ মাথা না ঘুরিয়ে দেখতে সাহায্য করে।

বিজ্ঞানীরা গিরগিটির ত্বকের ওপর যে তথ্য-উপাত্ত জেনেছেন, তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের। আরও গবেষণার মাধ্যমে এই রহস্যময় রং পরিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যা বি া েন গিরগিটির ত্বকের গবেষণা বিজ্ঞান ও প্রুক্ির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভানা তৈরি করবে। ভবিষ্যতে এই গবেষণার ফলাফল রং বদলানো কাপড় তৈরিতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন অঞ্চলে গিরগিটিকে চামড়ার জন্য শিকার করা হয়। অনিয়ন্ত্রিত শিকারের ফলে অনেক গিরগিটির প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। শিকার বন্ধ করে নিরাপদে থাকতে দিলে টিকে থাকবে গিরগিটি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version