/
/
/
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মপরিবেশে যৌন হয়রানি-কি আছে হাইকোর্টের নির্দেশনায়?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মপরিবেশে যৌন হয়রানি-কি আছে হাইকোর্টের নির্দেশনায়?
Byলাল সবুজ প্রকাশ
Published২৩ জুন, ২০২৫
৬:৫৬ অপরাহ্ণ
516646823_1181868137288453_5875725774706969096_n
লাল সবুজ প্রকাশ
বাংলাদেশের তারুণ্য নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন-ভিত্তিক মিডিয়া প্লাটফর্ম লাল সবুজ প্রকাশ। শিশু-কিশোর-তরুণদের চোখে অধিকার, জলবায়ু, সমতা, ন্যায্যতা ও সত্যের গল্পের খোঁজে গ্রাম থেকে শহর, পাহাড় থেকে চরের কথা তুলে ধরি আমরা। তুলে ধরি তাদের সৃজনশীলতা, ছড়াই সচেতনতার বার্তা।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

শিক্ষার আলো ছড়ানো অগ্রদূতরা শিক্ষক (10)

আলী আজগর ইমন


খবরের পাতায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, টিভিতে যেখানেই দৃষ্টি যাবে নারী যৌন হয়রানি, নিপীড়ন আর দুর্ভোগের শিকার এমন শিরোনামে ভরা খবর, পরিবারে শঙ্কা, সমাজের বাঁকা চাহনি! এর থেকে বাঁচার উপায় কি? অপরাধ ঠেকাতে আইনের বিকল্প নাই। এ জন্যই জানতে হবে ২০০৯ সালে “যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ককর্মপরিবেশ” তৈরিতে হাইকোর্টের নির্দেশনায় কি আছে-

যৌন হয়রানি এবং নির্যাতনের জন্য সুস্পষ্ট আইন এবং সুনির্দিষ্ট শাস্তির অভাবে অপরাধের মাত্রা বাড়ছিল, সংবিধানে সমতার বিধান থাকলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন, ফলে আইনের শূন্যতা ছিল স্পষ্ট। ২০০৮ সালে, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালমা আলী হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট করেন, যা ৫৯১৬/২০০৮ এ রিটের প্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশনা প্রদান করে। নির্দেশনা কার্যকর করতে সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদের সাহায্য নেওয়া হয়েছে – যা সুপ্রীম কোর্টের রায় বাধ্যতামূলক কার্যকরের ক্ষমতা দেয়।

নির্দেশনা দেশে পরিচালিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের জন্য কার্যকর করা হয়, যার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হলো- যৌন হয়রানি, হয়রানির কুফল এবং এটি যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ সে সম্পর্কে মানুষকে জানানো এবং সচেতনতা তৈরি।

প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ যারা দেখেন তারা নারী পুরুষের সমতা নিশ্চিত করবেন, আইনের সমতা এবং রাষ্ট্রের নিকট সমান আশ্রয় লাভের অধিকারে জোর দেওয়া হয়েছে নির্দেশনায়। নিয়োগকারী যৌন হয়রানি এবং নিপীড়নের ঘটনা প্রতিরোধ এবং শূন্যে নিয়ে আসতে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।

আসলে যৌন হয়রানি সম্পর্কে স্পষ্টতা দরকার, সচেতনতা এবং প্রতিরোধে কাজে আসে। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ বা আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, উক্তি বা শব্দের মাধ্যমে উত্যক্ত করা, সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা, পর্নোগ্রাফি দেখানো, যৌন আবেদন আছে এমন মন্তব্য বা ভঙ্গি, কারও পিছু নেওয়া, ছবি ও ভিডিও ধারণ, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে হুমকি, ভয়ভীতি দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক এগুলো মূলত যৌন হয়রানির মধ্যে পরে।

সকলের চেষ্টা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা, সচেতনতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে হয়রানি এবং নিপীড়ন নিয়ে আলোচনা এগুলোই পারে হয়রানির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করতে। সংবিধান এবং আইনে নারীর যে অধিকার আছে সেগুলো নিয়ে সকল শ্রেণি-পেশার নারীকে জাগ্রত করার মাধ্যমে হয়রানি কমিয়ে নিয়ে আসা যাবে। হয়রানি সম্পর্কিত আইন এবং শাস্তির কথা প্রচার করতে হবে।

হয়রানির বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ করতে ভয়ে থাকেন, অনেকেরই অজানা, এ বিষয়ে অভিযোগ করলে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তের পরিচয় অপরাধ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত গোপন থাকবে, অভিযোগকারীর নিরাপত্তা দেওয়া হবে, নিজে সরাসরি উপস্থিত না হয়ে অভিযোগ করা যাবে, নারী সদস্যের কাছে অভিযোগ বলার সুযোগ আছে। অভিযোগ কমিটির সদস্য ৫, যার বেশিরভাগ নারী এবং সম্ভব হলে প্রধান ও নারী হবেন।

কমিটি লঘু হয়রানির ক্ষেত্রে দুই পক্ষের সম্মতি নিয়ে অভিযোগ মীমাংসা করবে, এবং প্রতিবেদন জমা দিবে কর্তৃপক্ষের কাছে, অন্য ক্ষেত্রে তদন্ত করবে, তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে অফিস বাধ্য থাকবে। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় সচেতন থাকতে হবে। প্রয়োজনে কমিটি ৩০ থেকে ৬০ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় বাড়াতে পারবে।

যৌন হয়রানি এবং নির্যাতন প্রমাণ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের শৃঙ্খলাবিধি মেনে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে, অভিযোগ দণ্ড যোগ্য অপরাধ হলে সংশ্লিষ্ট কোর্ট ট্রাইবুনালে পাঠিয়ে দিবে।