

মরমি কবি, সুরসাধক ও লোকসংগীতের কিংবদন্তি হাসন রাজাকে শুনে নাই এমন বাঙালি পাওয়া দুষ্কর। আজ এ কবির ১৭১তম জন্মদিন। ১৮৫৪ সালের এই দিনে অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর, তিনি সুনামগঞ্জ’র লক্ষণশ্রী পরগনার তেঘরিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
গভীর মরমি চেতনা, সুফি দর্শন ও মানবকল্যাণমূলক দর্শনে সমৃদ্ধ হাসন রাজা বাংলা লোকসংগীতকে দিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতা। একদিকে তিনি ছিলেন জমিদার, অন্যদিকে ছিলেন আত্মার সাধক। জীবনের এক পর্যায়ে তিনি জাগতিক ভোগবিলাস ও জমিদারি জীবন ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক সাধনা ও বৈরাগ্যজীবন গ্রহণ করেন। তার দর্শন, গান ও সুর মানুষের অন্তর্লোকে আত্মোপলব্ধির পথ দেখিয়েছে যুগ যুগ ধরে।
হাসন রাজার রচিত অসংখ্য গান আজও বাংলার মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তার উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, এগুলোর মধ্যে ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে…’, ‘আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে…’, ‘লোকে বলে ঘরবাড়ি ভালা না আমার…’, ‘আগুন লাগাইয়া দিলও কুনে হাসন রাজার মনে…’, ‘গুড্ডি উড়াইল মোরে…’, ‘মৌলার হাতের ডুরি…’—সহ আরও বহু কালজয়ী সৃষ্টি। এসব গান বাংলায় চিরদিন অমর হয়ে থাকার উপযোগী।
মরমি এই কবির পুরো নাম দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী। বাংলা সন অনুযায়ী তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১২৬১ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ। তার পিতা ছিলেন দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী। হাসন রাজার গান, সুর ও দার্শনিক ভাবনা কেবল সুনামগঞ্জ বা সিলেট অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তিনি হয়ে উঠেছেন সমগ্র বাংলাদেশের তথা বিশ্বজুড়ে বাঙালি সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ।
মরমি সাধনা, মানবপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতার যে উত্তরাধিকার হাসন রাজা রেখে গেছেন, তা আজও বাংলা লোকসংগীত ও সংস্কৃতিকে আলোকিত করে চলেছে। আগামীতেও এ কবির অবদান উজ্জ্বল করেই যাবে বাংলা লোকসংগীতকে।