আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই শিশু।
একবিংশ শতাব্দীর তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে আমরা যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে একটি ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছি তখনও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি বিরাট অংশ অন্ধকার তিমিরই রয়ে যাচ্ছে। এসব প্রজন্মের সুবিধা বঞ্চিত চিত্র আমাদের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। পথশিশু শব্দটি সেই সব শিশুদের প্রকাশ করে,যাদের বেড়ে ওঠার সবকিছু পথে ফুটপাতে। এরা সমাজের সব মৌলিক অধিকারটুকু থেকেও সদা বঞ্চিত অবহেলিত উপেক্ষিত। মায়ের কোল হলো শিশুদের নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু পথ শিশুদের সেই সৌা্যটুকুও হয় না। পথশিশুরা বিদ্যালয়ের সম্মুখীন হয় না।
রাস্তাঘাটে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করে বা অন্য কাজ করে তারা। এর কারণ তাদের বাবা-মা কাজ করতে অক্ষম বা তাদের উপার্জন অতি সামান্য যা তাদের পরিবা পো ন যথেষ্ট নয়, অথবা তারা আশ্রয়হীন।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের জন্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির জনক ১৯৭২ সালে সংবিধানে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করেন। অধিকাশ পথশিশুর নিজস্ব কোন পরিবার থাকে না।
কেউ কেউ ঠিকমতো দুবেলা পেট ভরে খেতে পারেনা। কোনো সময় এক বেলা জুটলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয় অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অভ্যস্ত এসব শিশুকে ক্ষুধার তাড়নায় ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার কুড়িয়ে খেতেও দেখা যায়। পেটের দায়ে দিনমজুর, বাসের হেল্পার, রিক্সা চালানো, টোকাইয়ের কাজ, ইটভাঙ্গা আরও অনেক কাজ এরা করে থাকে। এরা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে আপনা থেকেই নিয়ম তৈরি করে নেয়। এসব পথ শিশুর কাঁধে থাকে সংগ্রহ করা বোতলের মলিন বস্তা। অথচ সেখানে থাকার কথা ছিল বইয়ের ব্যাগ। যে সময় তাদের সময় কাটানোর কথা পরিবারের সঙ্গে সেসময় তারা থাকে পথের কিনারায়। সাধারণত এসব পথশিশুর দেখা পাওয়া যায় বিভিন্ন জনসমাগম পূর্ণ স্থানে। বিশেষ করে লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন বাসস্টপেজ এসব জায়গায়। এরা যে শুধু পরিবারের স্নেহ বঞ্চিত তা নয়, এরা শিক্ষার আলো থেকেও বঞ্চিত। একথাও ঠিক যে, যাদের খাবার এবং পোশাক জোগাড় করা কঠিন তাদের জন্য পড়াশোনা অনেকটা দিবা স্বপ্নের মত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা খারাপ মানুষের সংস্পর্শে জড়িয়ে যায়।
পথশিশুদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ১০ থেকে ১২ বছর বয়সেই ড্যান্ডি, সিগারেট এবং গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে নানা রকম অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। মাদকে পয়সা যোগাতে তৈর করে কিশোর গ্যাং। রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছিে যে ক স উপেক্ষিত পথশিশুর যথাযথ পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই দেশ ও জাতির মঙ্গলের কথা মাথায় রেখেই এই শিশুদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হবে প্রত্যক শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। উপযুক্ত পুনর্বাসন, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার পেলে এরা হয়ে উঠবে বিশ্ব বিখ্যাত বজ্ঞানী, দেশ বরেণ্য সাহিত্যিক, সমজসেবক। সবার আগে হয়ে উঠবে একজন আদর্শ মানুষ। তাদের মনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারলে ফুলের মত প্রস্ফুটিত হতো তারা। তাই অবহেলিত এসব পথশিশুর পাশে একটু মানবতা ও আলো নিয়ে দাঁড়াতে হবে। পথ শিশুদের অপরাধের পথ থেকে ফেরাতে তাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
তবে শিক্ষার আগে আবাসন ও খাওয়া-দাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। সুতরাং এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘেয়াদী পরিকল্পনা ও পথশিশুদের নিযে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর পাশে থেকে তাদের আর্থিক ফান্ডের সহযোগিতার মাধ্যমে পথ শিশুদের শিক্ষার আলোয় পৌঁছানো সম্ভব। কথায় আছে, ‘একতাই বল ‘।অর্থাৎ পথ শিশু নামক অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে সরকারের সহযোগিতায় আমাদের দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এজন্য সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সব নাগরিককে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের সন্তানকে আমরা যেভাবে ভালোবাসি েমনি ওদেরকেও ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে হবে আমাদের সবসময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে আমাদের ছোট ছোট মানবিক উদ্যোগই বদলে দিতে পারে এই সমাজ ও এই দেশকে। তরুন প্রজন্মের হাত ধরেই এগিয়ে যাক এ সমাজ ও দেশ।
লেখা:পপি শীল