গত বেশ কয়েক বছর যাবৎ সমস্ত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক খরা, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে মহাসাগরের হাজার বছর ধরে জমে থাকা বরফ গলে যাওয়া থেকে শুরু করে মৌমাছির লার্ভা নষ্ট ়ে যাওয়ার মত ভয়ংকর সব তথ্য গবেষণার মাধ্যমে উঠে আসছে।
বিশ্বব্যাপী এই জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশেও বিভিন্ন স্থায়ী ও অস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন বিকট আকার ধারণ করছে। যা আমরা গত কয়েক বছরের তাপমাত্রা ও জলবায়ুর দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারি। গত ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় গত ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আইপিসিসির সাম্প্রতিক ক বষণা থেকে াা ায়, লবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বর্তমান সময়ের তুলনায় বার্ষিক গড় তাপমাত্রা বাড়বে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্াকাে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় শীতকালে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার হবে বেশি। শীতের তীব্রতা অনেকটাই কমে যাবে, কিন্তু গ্রীষ্মকালে গরমের মাত্রা ক্রমেই বাড়বে। এতে দেশে ছয়টি ঋতুর পরিবর্তে কেবল চারটি ঋতু আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যাবে।
বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাসস্থান হারাবেন। ১ কোটি মানুষ এরই মধযে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর ৪ লাখ মানুষ স্থায়ীভাবে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই জলবায়ু উদ্বাস্তু।
এসকল গবেষণা ও তথ্য উপাত্তের বাস্তবিক প্রমাণ আমরা বর্তমানে চোখের সামনে েখতে পাচ্ছি। অসহনীয় তাপমাত্রা ও বাতাসে আর্দ্রতার ঘাটতির কারণে বর্তমান সময়ে হিট স্ট্রোক ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মানুষ ও অন্যান্য জীবের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পরছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধারা হ্রাসের জন্য পরিবেশ দূষণ রোধ, অধিক বৃক্ষরোপণ ও বনায়ন এবং অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প কোন পদ্ধতি নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসের জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে এং সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।