/
/
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘পানিশূন্য’ হতে চলেছে কাবুল
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো 'পানিশূন্য' হতে চলেছে কাবুল
Byলাল সবুজ প্রকাশ
Published২৩ জুলাই, ২০২৫
৪:২০ অপরাহ্ণ
516646823_1181868137288453_5875725774706969096_n
লাল সবুজ প্রকাশ
বাংলাদেশের তারুণ্য নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন-ভিত্তিক মিডিয়া প্লাটফর্ম লাল সবুজ প্রকাশ। শিশু-কিশোর-তরুণদের চোখে অধিকার, জলবায়ু, সমতা, ন্যায্যতা ও সত্যের গল্পের খোঁজে গ্রাম থেকে শহর, পাহাড় থেকে চরের কথা তুলে ধরি আমরা। তুলে ধরি তাদের সৃজনশীলতা, ছড়াই সচেতনতার বার্তা।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

Untitled design (29)

আধুনিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি রাজধানী শহর পুরোপুরি ‘পানিশূন্য’ হওয়ার মুখে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে প্রতিদিন পানির জন্য জীবন-মরণের লড়াই করছেন বাসিন্দারা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ভয়াবহ এই জলসংকটের মুখে পড়েছে শহরটি।

৪২ বছর বয়সী রাহিলা নামের এক নারী জানান, পানির গাড়ির শব্দ পেলেই তিনি বালতি আর কনটেইনার হাতে রাস্তায় দৌড়ান। দেরি করলে আর পানি পাওয়া যায় না। তার কথায়, ‘পানি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। এখন এটা আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা মার্সি কর্পস জানায়, কাবুলে পানি সংকটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গত তিন দশকে কাবুলের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০ লাখ থেকে এখন তা ৫০ লাখের কাছাকাছি। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে শহরের অর্ধেকের বেশি কূপ ইতিমধ্যে শুকিয়ে গেছে।

প্রতিবছর কাবুলে প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ কিউবিক মিটার বেশি পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতি সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারছে না।

শহরের বাসিন্দা আহমদ ইয়াসিন জানান, একসময় পরিবার নিয়ে মসজিদের লাইনে দাঁড়িয়ে পানি সংগ্রহ করতেন। পরে ৪০ হাজার আফগানি খরচ করে ১২০ মিটার গভীর কূপ খনন করেছেন তিনি। তবে সেই পানিও নিরাপদ নয়। ‘আমরা সেই পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তবেই খাই,’ বলেন ইয়াসিন।

মার্সি কর্পসের তথ্য অনুযায়ী, কাবুলের ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত। অপ্রশিক্ষিত স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও কারখানার বর্জ্যের কারণে এসব পানিতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। এতে ডায়রিয়া ও বমির মতো রোগ ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নারী ও শিশুরা। অনেক নারীকে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হয়। তালেবানের বিধিনিষেধে একা বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের পথ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এক তরুণী বলেন, ‘একজন মেয়ের একা রাস্তায় পানি আনতে যাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পথে হেনস্তা হওয়াটা এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়।’

এমনকি শিশুরাও স্কুল বাদ দিয়ে পানি সংগ্রহে বের হচ্ছে। তারা ভারী বালতি হাতে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটছে, যা শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ও শিক্ষাজীবনের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা দারিদ্র্য ও বৈষম্যকে আরও তীব্র করে তুলছে।

অবস্থা আরও জটিল করে তুলেছে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। ২০২৫ সালের মধ্যে কাবুলে পানি ও স্যানিটেশন খাতে প্রয়োজন ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অথচ এখন পর্যন্ত মাত্র ৮০ লাখ ডলার তহবিল এসেছে।

রাহিলা বলেন, ‘যখন এখানে এসেছিলাম, জীবন ছিল অনেক সহজ। এখন টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার নতুন কোথাও গিয়ে শুরু করতে হবে। কিন্তু যাবই বা কোথায়?’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট কাবুলের জন্য একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। উন্নয়ন, মানবিক সহানুভূতি এবং টেকসই নীতির অভাব হলে এমন ভয়াবহ বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব নয়।