/
/
/
জেন-জির বিষণ্ণতার উত্থানে ইতিবাচক আলাপের সময় এসেছে
জেন-জির বিষণ্ণতার উত্থানে ইতিবাচক আলাপের সময় এসেছে
Byরুশাইদ আহমেদ
Published১৫ নভেম্বর, ২০২৫
৫:৪৩ অপরাহ্ণ
আরইউএস_21
রুশাইদ আহমেদ
রুশাইদ আহমেদ অধ্যয়ন করছেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। উন্নয়ন, মানবাধিকার, যোগাযোগ, ভূরাজনীতিসহ বিবিধ বিষয়ে তিনি দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন। সাংবাদিকতা এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ওপরও রয়েছে তাঁর তুমুল ঝোঁক।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

depression1

অনেকেই এখন বিষণ্ণতায় ভুগতে শুরু করেছেন। দেখা যায়, হঠাৎ বায়ু হ্রাস পেয়ে আসে, তোমার বুক রুদ্ধ হয়ে আসে। এক ধরনের ভয় গ্রাস করে ফেলে আমাদের। যেন প্রশান্তির বদলে শ্বাসরুদ্ধকর হতাশায় মগ্ন হয়ে যাই আমরা। এতে অনেক জেন-জি তরুণের জন্য বাইরের আনন্দ উপভোগ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এ ধরনের সমস্যায় যে তুমি শুধু একা ভুগছ, এমনটা নয়। ২০২৪ সালের একটি পরিসংখ্যান মোতাবেক, ১২–১৭ বছর বয়সীদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন উদ্বেগ বা বিষণ্নতার উপসর্গে ভুগছেন। পাশাপাশি, ৬৫% জেন-জি তরুণ মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছেন বলে শিকার করেছেন এক নিরীক্ষায়। এই সংখ্যা আদতে অনুধাবন করায় যেন ভারী পৃথিবী তার ওজন কীভাবে তাদের কাঁধে রেখে দিয়েছে।

হাতের ফোনও যেভাবে ফাঁদ

ফোন কিংবা যে ডিভাইস দিয়ে আপনি এই লেখা পড়ছেন, সেটিকে একই সঙ্গে আশ্রয় আর ফাঁদ বলে অভিহিত করা যেতে পারে। মূলত সামাজিক মাধ্যম আমাদের জন্য একটা কমিউনিটি তৈরি করে দেয়, যা ফটো ফিল্টার, কৃত্রিম অবতার কিংবা অবয়ব, বিলাসী জীবন উপাদান, “পারফেক্ট” সম্পর্কের মতো আমাদের কৃত্রিম রূপও তৈরি করছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গোটা অনলাইন কমিউনিটিতে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার ১৫৬ জন তরুণ আত্মহত্যা সংক্রান্ত কনটেন্টের সঙ্গে নিয়মিত মিথস্ক্রিয়া করে থাকেন। জেন-জিদের জন্য এই ক্রমবর্ধমান পরিসংখ্যান গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।

একইসঙ্গে, নিখুঁত অনলাইন পরিচয় ধরে রাখা ও সবার সঙ্গে তাল মেলানোর চাপ এক অদম্য ভীতি তৈরি করছে, যাকে বলা হচ্ছে “ফিয়ার অব মিসিং আউট (এফওএমও)”। সাইবারবুলিং, হিংসা, ডিজিটাল ভেদাভেদের মতো বিষয়াদি এটিকে আরও উসকে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এগুলো বাস্তব জীবন ও ডিজিটাল জীবনের সীমানা অস্পষ্ট করে দিচ্ছে। যা ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি আর অপর্যাপ্ততার অনুভূতি জন্ম দিচ্ছে।

অস্থির পৃথিবীতে নাজুক প্রজন্ম

জেন-জি প্রজন্মের তরুণেরা এমন এক যুগে বড় হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, জলবায়ু ধস, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, অধিকারহানির মতো পরিস্থিতি পার করেছে। তাদের নয়জনের মধ্যে আটজন বিশ্বাস করে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি হলো মানবাধিকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। অথচ ১৭% তরুণের এখনও কোনো স্বাস্থ্যবীমা নেই।

এ ছাড়া, অর্ধেকের বেশি তরুণ প্রয়োজনীয় মানসিক চিকিৎসা পায় না। তারা খোলাখুলি বিষণ্নতার কথা বলে। কিন্তু প্রায়ই এমন এক থেরাপিস্টের অপেক্ষায় থাকে যাকে তারা সমাধান এনে দিতে পারে না।

হতাশার উত্থান

হতাশা বা উদ্বেগ কেবল মানসিক অবস্থা নয়, এটি এমন এক জটিল অবস্থা যা মন ও শরীর দুটোতেই প্রভাব ফেলে। ২০১০ সালে হতাশাজনিত রোগের পরিমাণ ছিল ৭.৬২%, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০%-এ।

অনেকের জন্য এটি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হয়—পেটের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, পেশীর টান, হৃদকম্পন ইত্যাদি দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে অটোইমিউন রোগেরও ঝুঁকি বাড়ায়। ১২–২৭ বছর বয়সীদের ৬০% এখন উল্লেখযোগ্য মানসিক চাপ বা সামাজিক উদ্বেগ অনুভব করছে।

অন্ধকার প্রান্ত: আত্মহত্যা

মার্কিন অধ্যাপক ডেভ মার্কোট বলেছেন, গত দশকের শেষ দিকে আত্মহত্যার হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ২০০৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০-২৪ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে ৬২%। কেবল ২০২১ সালেই ১৪–১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর তৃতীয় কারণ ছিল আত্মহত্যা। প্রায় দুই হাজার তরুণের প্রাণহানি ঘটেছে এতে। তাদের বাইরেও হাজারো তরুণ আত্মহত্যার চিন্তা করেছে বা চেষ্টা করেছে।

আপাতদৃষ্টিতে জেন-জির মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের মূলে রয়েছে ডিজিটাল চাপ, সামাজিক প্রত্যাশা, অন্যায়ের ভারের মতো বাস্তবতা। তারা ভবিষ্যতের দায় বহন করছে, অথচ নিজেদের খোঁজে আছে। তবু আশা আছে—বাথরুমের সিঙ্ক ধরে রাখা কিশোরী ফিরে যাবে ক্লাসে; বন্ধুরা গ্রুপচ্যাটে হেল্পলাইনের নম্বর আর মিম শেয়ার করবে। এটি হয়ে উঠবে নীরব না থাকার এ এক সম্মিলিত প্রতিরোধ।

আমরাই হয়তো “উদ্বিগ্ন প্রজন্ম”! কিন্তু আমরাই সেই প্রজন্ম যারা যন্ত্রণা চিনে একটা ভালো সিস্টেম গড়ে তোলার দাবি তুলে টিকে থাকার নতুন ভাষা গড়তে পারি। কারণ আমরা জানি, বাতাস কমে যাওয়ার পরও তখন নিঃশ্বাস ধরে রাখাই জীবন।

ভয়াবহ সংযোগ

বিষণ্নতার সঙ্গে আত্মহত্যার সম্পর্ক স্পষ্ট হলেও উদ্বেগও একইভাবে বিপজ্জনক। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্যানিক ডিসঅর্ডার, জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি বা পিটিএসডিতে ভোগে, তাদের আত্মহত্যাপ্রবণতা বেশি কোনোরূপ বিষণ্নতা ছাড়াই। কারণ উদ্বেগ বিকৃত চিন্তা সৃষ্টি করে, মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে, জীবনের অর্থহীনতা বোধ বাড়ায়। যে শরীরে নিরাপত্তা নেই, তার কাছে মৃত্যুই কখনও মনে হয় মুক্তি।

তাই সবকিছুর শেষেও শুরুতে ফিরে যাই আমরা। সেই বুকে টান, ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস, ভারী মন। তবু জেন-জি প্রজন্ম উঠে দাঁড়িয়ে নিজের যন্ত্রণা উচ্চারণ করে ভারী এই পৃথিবীতে টুকরো টুকরো শান্তির মুহূর্ত গড়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

 

সূত্র:সিমরেন বিন্দ্রা, জেন-জাইন (ভাষান্তর-রুশাঈদ আহমেদ)