

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা স্থানে ভাষার দাবিতে সংগ্রাম হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে নানা সময় বিভিন্ন রাজ্যে ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবি উঠেছে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ হিন্দিকে ভারতের জাতীয় ভাষা করার ইঙ্গিত দিলে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। অবশ্য পরে অমিত শাহ তার বক্তব্য অস্বীকার করেছেন।
বাঙালির ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দেয়ার পশ্চিম পাকিস্তানি জুলুমের প্রতিবাদ এবং মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার রক্তাক্ত দিন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। এ দিন ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন রফিক-সালাম-বরকতরা। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি (৪ ফাল্গুন, ১৩৬২ সাল) উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার।
পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক অনন্য ঘটনা। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক দিবসে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ফলে এখন পৃথিবীজুড়ে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
‘ভাষার জন্য আন্দোলন’ কিংবা ‘আন্দোলনের অন্যতম উপলক্ষ ভাষা’ –এমনভাবে অধিকার আদায়ের আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই হয়েছে। কোথাও অহিংস আবার কোথাও সহিংস। আবার স্বাধীন দেশে বিভিন্ন ভাষার জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার লড়াই হয়েছে, এখনো চলছে।
ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পৃথিবীর নানা স্থানে ভাষার দাবিতে সংগ্রাম হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে নানা সময় বিভিন্ন রাজ্যে ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবি উঠেছে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ হিন্দিকে ভারতের জাতীয় ভাষা করার ইঙ্গিত দিলে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তীব্র প্রতিবাদ করা হয়। অবশ্য পরে অমিত শাহ তার বক্তব্য অস্বীকার করেছেন।
ভাষার দাবিতে ভারতে সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয় ১৯৬৫ সালে, যখন হিন্দিকে একমাত্র সরকারি ভাষা করা হয়। ১৯৬৫ সালের ২৬ জানুয়ারি তীব্র আন্দোলন শুরু হয়, দলে দলে মানুষ রাজপথে নেমে আসে। প্রায় দুইমাস ধরে সহিংসতা চলে দক্ষিণাঞ্চলে, বিশেষ করে মাদ্রাজে। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৭ সালে হিন্দির সঙ্গে ইংরেজিকেও ব্যবহারিক সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বর্তমানে ভারতে ২২টি ভাষা সরকারের তালিকাভুক্ত এবং ৪টি ভাষাকে ঐতিহ্যবাহী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যদিও দেশটিতে মোট ভাষার সংখ্যা শ’খানেক। কেন্দ্রীয়ভাবে দাপ্তরিক ভাষা হিন্দি ও ইংরেজি।
এছাড়া আসামে ভাষার প্রশ্নে আন্দোলন হয়েছিল ১৯৬১ সালে। তৎকালীন প্রাদেশিক সরকার কেবল অহমীয় ভাষাকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা করার সিদ্ধান্ত নিলে আন্দোলনটি হয়। পরে অবশ্য বাঙলাকেও স্বীকৃতি দেয় প্রাদেশিক সরকার।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাষা আন্দোলন করেছিল স্কুলছাত্ররা। ১৯৭৬ সালের জুন ১৬ স্কুলের কিশোররা প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। যুক্তরাষ্ট্রে নেটিভ আমেরিকানরা বারবার তাদের ভাষা রক্ষার আন্দোলন করেছে। গত শতকের ষাট-সত্তরের দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় এই আন্দোলন গতি পায়। কানাডাতে, বিশেষত কানাডার পূর্ব অংশের অঙ্গরাজ্য কুইবেকে ভাষার স্বাধীনতা চেয়ে আন্দোলন হয়েছে বেশ কয়েকবার। লাটভিয়াতে গণভোটে লাটভিয়ানরা কয়েকশ বছরের প্রধান ভাষা রুশকে সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
ভারত
দক্ষিণ ভারতে ভাষার জন্য প্রথম রাজনৈতিক প্রতিবাদ হয় ১৯৩৭ সালে। তৎকালীন ব্রিটিশ রাজের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির স্থানীয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস সরকারস্কুলে হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে এ আন্দোলন শুরু হয়। তিন বছরব্যাপী এ আন্দোলন অনশন, সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা, পিকেটিং ও সহিংস প্রতিবাদ পর্যন্ত গড়ায়। কঠোরহস্তে আন্দোলন দমনের কৌশল নেয় সরকার। এতে প্রায় দুইজন প্রাণ হারায় এবং নারী-শিশুসহ ১ হাজার ১৯৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩৯ সালে কংগ্রেস সরকার পদত্যাগের পর ১৯৪০ সালে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ব্রিটিশ গভর্নরের হস্তক্ষেপে বাধ্যতামূলক হিন্দি শিক্ষার আইন প্রত্যাহার করা হয়। এতে ভারতীয় কেন্দ্রীয় কংগ্রেস সরকার নাখোশ হলেও স্থানীয় আন্দোলন শেষ হয়।