/
/
/
ডেঙ্গু: লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
ডেঙ্গু: লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
Byতারান্নুম মারিয়া রিদিতা
Published২০ আগস্ট, ২০২৫
১:৫৮ অপরাহ্ণ
WhatsApp Image 2025-08-20 at 2.09.10 PM
তারান্নুম মারিয়া রিদিতা
তারান্নুম মারিয়া রিদিতা সাউথ এপোলো মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং লাল সবুজ প্রকাশের ফিচার লেখক। তিনি লেখালেখির মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। তার লক্ষ্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সতর্কতা বৃদ্ধি করা।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

Untitled design (12)

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা অন্যতম একটি রোগের নাম হলো ডেঙ্গু। গনমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ২১০০০ মানুষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছুইছুই। প্রতিবছর জুন থেকে অক্টোবর মাসকে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম বলা হলেও বিগত কয়েক বছর বেশ আগেভাগেই এ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন। ফলে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক আতঙ্ক।

ডেঙ্গু মূলত একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। প্রশ্ন হচ্ছে এডিস মশা কামড়ালেই কি ডেঙ্গু হয়? উত্তর হলো- না। পরিবেশে উপস্থিত কোনো ডেঙ্গু ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশাকে সংক্রমিত করে শুধুমাত্র তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এডিস মশার ভিতরে কেবলমাত্র স্ত্রী মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে এরা এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
এডিস মশা মূলত দিনের আলোতে কামড়ায়। ভোরবেলা ও সন্ধ্যার পূর্বে গোধূলিলগ্নে এই মশার প্রকোপ বেশি থাকে, এছাড়া দুপুর ও বিকাল বেলাতেও এডিস মশা কামড়াতে পারে।
মানুষের সাধারণত ক্ল্যাসিকাল এবং হেমোরেজিক দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়। ক্ল্যাসিকাল ডেঙ্গু জ্বরে রোগী সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে গেলেও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মানুষের জন্য মারাত্মকরকম ক্ষতিকর হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে এই জ্বর প্রাণঘাতী হওয়ারও সম্ভবনা রয়েছে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ আমাদের সবারই ভালোভাবে জানা উচিত- ডেঙ্গু জ্বরের সবচেয়ে কমন লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। এই জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত থাকতে পারে। এর পাশাপাশি মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, হাত ও পায়ের হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা, স্কিনে লালচে র‍্যাশ, রক্তচাপ কমে যাওয়া, বমি,কোষ্ঠকাঠিন্য ও শরীরে জেনেরাইলজড দূর্বলতা অনুভূত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর NS1 ও এন্টিজেন-এন্টিবডি টেস্ট করতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, Prevention is better than cure তাই আমাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে।

ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে সেজন্য অফিস, ঘর এবং এর আশেপাশে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও পানি জমা থাকলে তা দুই থেকে তিন দিন পর পর পরিবর্তন করতে হবে। ফুলের টব,যেকোন ধরণের পাত্র, টায়ার, ড্রাম, মাটির পাত্র, বালতি, টিনের কৌটা, ডাবের খোসা, কন্টেইনার, এসির জমে থাকা পানি ইত্যাদিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। তাই এসব স্থানে যেন বৃষ্টির বা অন্যকোন পানি না জমে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। দিনের বেলা ঘুমালে মশারী ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গুর মৌসুমে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে হবে। যেমন স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি। এসময় রোগীর আয়রন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উত্তম।সকল ধরণের মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যে প্রোটিন বেশি থাকা এসব খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। এসময় খেয়াল রাখতে হবে শরীর যেন পানি শূন্যতায় না ভোগে। সাধারণত দিনে ২-৩ লিটার পানি খাওয়া উচিত। জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবনই যথেষ্ট। তবে কেউ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে এ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ পরিহার করতে হবে কেননা এসময় এ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে তা শরীরে ব্লিডিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে প্রধান অস্ত্র হলো সচেতনতা। আমাদের আশেপাশে এডিস মশা যেন বংশবৃদ্ধি না করতে পারে, দিনের বেলা যেন মশার কামড় থেকে নিরাপদ থাকা যায় সে বিষয়ে সচেতন থাকলেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। পাশাপাশি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে তার পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে। তাহলেই আমরা পারবো মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পরা এ রোগ থেকে বাচতে।