

জীবনে কখনো মাথাব্যথা হয়নি এমন মানুষ বোধহয় একজনও পাওয়া যাবেনা। মাথা থাকলে মাথা ব্যথা হবেই, তেমনই মাথাব্যথার একটি ধরণ হলো মাইগ্রেন।
চলো আগে জেনে নেই মাইগ্রেন কি,মাইগ্রেন এক ধরনের নিউরোভাস্কুলার ডিজঅর্ডার। এক বিশেষ ধরণের মাথাব্যথা যেখানে ব্যথা মাথার একপাশে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে ওই পাশের পুরো স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মাথাব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাব বা চোখে আলোর ঝলকানি দেখার মতো লক্ষণও থাকতে পারে।
মাইগ্রেনের অনেকগুলো প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন: মাইগ্রেন উইথ aura, মাইগ্রেন উইথআউট aura, হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন, রেটিনাল মাইগ্রেন, ক্রনিক মাইগ্রেন, মাইগ্রেন উইথ ব্রেইনস্টেম aura ইত্যাদি। এখানে aura বলতে মাইগ্রেনের মাথাব্যথা শুরু হওয়ার আগে বা সাথে সাথে যেসব স্নায়বিক উপসর্গ যেমন: চোখে আলোর ঝলক দেখা, ঝাপসা দেখা, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা সঠিক শব্দ বের না হওয়া ইত্যাদিকে বোঝায়।
মাইগ্রেন ঠিক কি কারণে হয় তা সুনির্দিষ্টভাবে এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম, হরমোনাল পরিবর্তন, ঘুম কম হওয়া বা রাতে ঘুম না হওয়া, হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, খাবারে অনিয়ম করা, ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত চা বা কফি পান করা, পরিবেশগত পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাইগ্রেনের সমস্যা বেশি হয়।
মাইগ্রেনের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। মূলত সিম্পটম বেসড চিকিৎসার মাধ্যমেই মাইগ্রেনের রোগীকে সুস্থ করা হয়ে থাকে।
তবে বেশকিছু নির্দেশনা মেনে চললে মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন:
১। ঘুমের জন্য নিয়মিত সময়সূচি
২। খাওয়াদাওয়া জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি
৩। কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করা
৪। অতিরিক্ত আলো বা কম আলোতে কাজ না করা
৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
৬। মাথাব্যথার সময় ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা
৭। শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া
৮। ক্যালশিয়াম, ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা
৯। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় বাড়তি যত্ন নেওয়া
১০। উচ্চ শব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা
১১। Screen time কমিয়ে আনা, টানা বেশিক্ষণ ফোন, কম্পিউটার বা টেলিভিশনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে না থাকা।
১২। অতিরিক্ত চা, কফি ও কোমল পানীয় সেবন পরিহার করা।
তুমি যদি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হও তবে খেয়াল রাখবে পারিপার্শ্বিক কোন কোন কারণে, দৈনন্দিন রুটিনে কি কি পরিবর্তন আসলে তোমার মাইগ্রেনের ব্যথা কমছে বা বাড়ছে, কোন কোন খাবার তোমার মাইগ্রেনের প্রবণতা বৃদ্ধি করছে। মাইগ্রেনের কারণ ব্যক্তিভেদে আলাদা হতে পারে। তাই সচেতনতা ও সতর্কতা বৃদ্ধির ফলে তুমি নিজেই অনুধাবন করতে পারবে তোমার মাইগ্রেনের কারণগুলো। তাই সতর্ক থাকো, করণীয় বিষয়গুলো মেনে সুস্থ থাকো। তবে মাথাব্যথা যদি তীব্র ও দীর্ঘসময় যাবৎ হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সুস্থ থাকো, সচেতন থাকো।