

সিসা দূষণের কারণে দেশে তৈরি হওয়া নীরব জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় জাতীয় কৌশলপত্র চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রতিবছর সিসা দূষণের প্রভাবে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে— এই প্রেক্ষাপটে একটি সমন্বিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ।
গতকাল মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মাল্টিসেক্টরাল স্টিয়ারিং কমিটি’র সভায় কৌশলপত্রের খসড়া পর্যালোচনা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্তির নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই কৌশলপত্রকে শিশু, শ্রমিকসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সিসার মারাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষার একটি অপরিহার্য জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
খসড়া কৌশলপত্র অনুযায়ী, সারা দেশে সিসার সংস্পর্শ হ্রাস, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি সমন্বিত ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পরিবেশে সিসার বিভিন্ন উৎস— যেমন সিসাযুক্ত রঙ, অনুমোদনহীন ব্যবহৃত সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি (ইউএলএবি) পুনর্ব্যবহার, সিসাযুক্ত রান্নার সরঞ্জাম, খেলনা ও শিল্পজাত পণ্য— নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি কৌশলপত্রে উল্লেখ থাকবে।
পাশাপাশি ই-রিকশাসহ ব্যাটারি-চালিত যানবাহনের দ্রুত বিস্তারের ফলে সৃষ্ট ই-বর্জ্য প্রবাহকে গুরুতর পরিবেশগত ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে এর নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনাও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পাঠ্যক্রম সংশোধন, শিল্প নীতিমালা, শ্রম সুরক্ষা, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার চলমান কার্যক্রমকে একীভূত করাই এই কৌশলপত্রের মূল উদ্দেশ্য।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, উপসচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু, এবং সিসা দূষণ নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শ্রম, কৃষি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পিওর আর্থসহ উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরাও সভায় অংশ নেন।
সভায় সচিব বলেন, জাতীয় কৌশলপত্রটি চূড়ান্ত হলে দেশের শিশু ও শ্রমিকসহ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সিসার ক্ষতিকর সংস্পর্শ থেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে। এটি একটি নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার পথে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।