/
/
১৩ বছরের ছোট্ট মেয়েটিই বাংলাদেশকে এনেদিলো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে প্রথম স্বর্ণ
১৩ বছরের ছোট্ট মেয়েটিই বাংলাদেশকে এনেদিলো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে প্রথম স্বর্ণ
ByMozammel Haque Hridoy
Published২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
১২:৫২ অপরাহ্ণ
1762172769579
Mozammel Haque Hridoy
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে লাল সবুজ প্রকাশের সাব-এডিটর হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সিজে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ‘Northify’ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের বেরোবি প্রতিনিধি ছিলেন।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

chaiti

একসময় মেয়েটিকে দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন মা-বাবা। বয়স বাড়লেও শরীর বাড়ছিল না অন্য শিশুদের মতো। হাত-পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে জানতে পারেন এর কারণ। যে বাস্তবতা একসময় পরিবারকে ভেঙে দিয়েছিল, সেই বাস্তবতাকেই শক্তিতে পরিণত করে আজ ইতিহাস গড়েছে অষ্টম শ্রেণির চৈতী রানী দেব।

সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫-এ দেশের হয়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জিতে নিয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এই ১৩ বছর বয়সী ক্রীড়াবিদ। শুধু একটি নয়—দুটি স্বর্ণপদক এনে দিয়ে দেশের প্যারা ক্রীড়াঙ্গনে আলো ছড়িয়েছে সে।

মাঠে নামলেই স্বর্ণের গল্প

পদক জয়ের যাত্রা শুরু হয় জ্যাভলিন থ্রো ইভেন্টে। ১১ মিটার দূরত্বে বর্শা নিক্ষেপ করে স্বর্ণপদক নিশ্চিত করে চৈতী। এরপর ১০০ মিটার দৌড়েও স্বর্ণ জিতে নেয় সে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন আত্মবিশ্বাসী পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ পায় দারুণ এক গর্বের মুহূর্ত।
চৈতীর এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে বাংলাদেশ দল মোট ৩টি স্বর্ণ ও একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে। সাঁতারে ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে স্বর্ণ এবং ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ব্রোঞ্জ জেতেন মো. শহিদুল্লাহ। পাশাপাশি মেয়েদের হুইলচেয়ার বাস্কেটবল দলও পদক নিশ্চিত করে—যা বাংলাদেশ জাতীয় প্যারালিম্পিক কমিটির ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।

গ্রাম থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতী বর্তমানে ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। একসময় গ্রামবাসীর চোখে সে ছিল কেবলই ‘খর্বাকৃতি’ একটি মেয়ে। তার ভেতরের ক্রীড়াপ্রতিভা তখনও ছিল অজানা।

পরিবর্তনের সূচনা ঘটে স্থানীয় সংগঠন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স (শি)-এর হাত ধরে। বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার সুযোগ দিতে গিয়ে সংগঠনটির সদস্যদের নজরে পড়ে চৈতী। সেখান থেকেই শুরু হয় তার ক্রীড়া-যাত্রা।

বদলে গেছে সবকিছু

আজ ভূনবীর গ্রামে চৈতী আর করুণার নয়, গর্বের নাম। বাড়িতে এসে খোঁজ নেন গ্রামবাসী। শিক্ষকরা খেলতে উৎসাহ দেন, স্কুলে সে এখন এক ‘তারকা’।
চৈতীর মা শিলু রানী দেব গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার মেয়ে যে এত ভালো খেলতে পারে, সেটা আমি কল্পনাও করিনি। শি সংগঠনটি না থাকলে হয়তো মেয়ের প্রতিভা আমরা জানতেই পারতাম না।”

অনুপ্রেরণার নাম চৈতী

৭ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে চৈতী রানী দেব কেবল পদকই জেতেনি—সে জিতেছে হাজারো মানুষের হৃদয়। খর্বাকৃতি শরীর নিয়ে যে মেয়েটিকে একসময় করুণ চোখে দেখা হতো, আজ সে প্রমাণ করে দিয়েছে-
উচ্চতা নয়, স্বপ্নই মানুষকে বড় করে।

চৈতীর স্বপ্ন আরও বড়। সে খেলাধুলা চালিয়ে যেতে চায়, পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হতে চায়। তার বিশ্বাস—ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে কোনো সীমাবদ্ধতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।