

বাংলাদেশের পাহাড়ে বহু জনগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের বাস দীর্ঘকাল থেকেই। ম্রো সম্প্রদায়ের বসবাস বিশেষ করে বান্দরবান জেলাকে ঘিরে। সারা দেশে প্রায় লাখ খানেকের বেশি ম্রো সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। বান্দরবানের লামা উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ে বাঁশ, গাছ ও ছনের তৈরি একটা স্কুল নির্মিত হয়েছে এ সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষার লক্ষ্যে। যে স্কুলের নাম ‘পাওমুম থারক্লা’। ম্রো শব্দ পাওমুম এর অর্থ হিসেবে জানা যায়, ‘ফুলের কলি ফোটাতে হবে’। কখনই লামার বাইরে না যাওয়া শিশুগুলো এই প্রথম এসেছে ঢাকাতে, নিজেদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা, ইতিহাস তুলে ধরতে, নিজেদের গল্প শোনাতে। তাদের গল্প তুলে ধরতে আয়োজন করা হয়েছে পাওমুম পার্বন ২০২৫ উৎসব।
রাজধানীর ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ২৬ জন ম্রো শিশু শিক্ষার্থী ও ম্রো সম্প্রদায়ের ৪০ জনকে নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় এ উৎসব। যা চলার কথা ছিল আগামী ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় দুদিন নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ আয়োজনের সময় দুদিন বাড়তে পারে বলে জানায় আয়োজকরা।
জানা যায়, বান্দরবানের সদর উপজেলায় ম্রো সম্প্রদায়ের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় ম্রোদের শিক্ষার তেমন প্রসার নেই, সুযোগও নাই দুর্গম পাহাড়ে বসবাসসহ অন্যান্য নানা কারণে। ম্রো শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ও তাদের ঐহিত্য তুলে ধরার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে ছোট পরিসরে পরিকল্পনা করে কয়েকজন তরুণ। ২০১৬ সালে মাত্র ৩ জন ম্রো শিশুকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এই পাওমুম থারক্লা। যার বর্তমান শিক্ষার্থী ৬৮ জন ম্রো শিশু। এ স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উল্লেখ্য মোট ৩ ব্যক্তি। স্কুলের জমিদাতা ও কারবারী চংকক ম্রো আর অন্যজন ম্যানরং ম্রো এবং একমাত্র বাঙালী সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার পারভেজ। এই ৩ ব্যক্তির যৌথ উদ্যোগে এবং উথৈয়াই মারমাসহ শতাধিক ভলান্টিয়ারদের সহায়তায় এ প্রতিষ্ঠান আজ এতদূর এসে পৌঁছাতে পেরেছে। ৬৮ শিক্ষার্থীর এ স্কুলের ৩০ শিশু থাকে হোস্টেলে যার ব্যবস্থা করে বান্দরবান জেলা পরিষদ। বর্তমানে মোট চারজন শিক্ষক রয়েছে।
এ বছর পাওমুম পার্বন উৎসবে ম্রোদের নানা আয়োজন পরিবেশন করা হচ্ছে ঢাকায়। যেখানে থাকছে ম্রোদের নিজস্ব ‘প্লুং’ বাঁশির আয়োজন, নিজেদের সংস্কৃতির গান ও নাচ, হাতে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, বিভিন্ন খাবার প্রদর্শনী এবং সর্বপরি শিশুদের হাতে আঁকা নানারকমের চিত্রকর্মসহ বহু কিছু।
সপ্তাহজুড়েই এ আয়োজনে শিশুদের তৈরি চিত্রশিল্প কর্ম, শুভাকাঙ্ক্ষীদের পাঠানো চিত্রকর্ম, শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের বাঁশের তৈরি কারুশিল্প, বুনন প্রদর্শনী, ঐতিহ্যবাহী পোশাক, লেখা বই, ফটোগ্রাফি, শর্টফিল্ম এবং বিভিন্ন লাইভ পারফর্মেন্স উপাস্থাপন করা হচ্ছে।
ঢাকায় তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ম্রো শিশুরা বলে, “ঢাকা কখনও আসতে পারব ভাবতামই না। ঢাকায় এসে এত সুন্দরভাবে সবকিছু দেখছি, খুব মজা লাগছে। আবার ঢাকা আসবো।”
এ আয়োজন ও স্কুল সম্পর্কে সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার পারভেজ লাল সবুজ প্রকাশকে বলেন, দীর্ঘসময়ের ফল আজকের এই পাওমুম থারক্লা। এ স্কুল শুরুর দিকে কখনও কল্পনাও করতে পারিনি যে এটা এভাবে দাঁড়াবে। আর পাওমুম পার্বণ এর আগেও বান্দরবানে আমরা করেছি। তবে ঢাকায় এই প্রথম। বাচ্চাগুলো ঢাকায় এসেছে, শিখছে, জানতে পারছে বহুকিছু। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিও তুলে ধরছে ঢাকার মানুষদের কাছে। এ আয়োজনে সহায়তা করা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’’