Sunday, December 22, 2024
Homeভ্রমণস্পিরিট অব ইনোভেশন বিশ্বের যে বিমান সবচেয়ে দ্রুততম

স্পিরিট অব ইনোভেশন বিশ্বের যে বিমান সবচেয়ে দ্রুততম

দ্রুতগতির বিমান শুনলেই মনে আসে জেট বিমানের কথা। সুপারসনিক গতিতে বিকট শব্দে আকাশে উড়ে বেড়ায় এ বিমান। এই জেট বিমানের গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১ হাজার ২৩৫ কিলোমিটার। এই গতি শব্দের গতিকে ছাড়িয়ে যায়। বিশাল আকারের টার্বোজেট ইঞ্জিন থে এই গতি আসে। তবে সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে অত্যাধুনিক নতুন নতুন দ্রুতগতির বিমান তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশের কথাও ভাবতে শুরু করেছে বিমান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যেহেতু জ্বালানিচালিত বিমান প্রচুর জ্বালানি ব্যবহার করে এবং পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলে, তাই নতুন করে বিদ্যুৎ–চালিত বিমান তৈরি করার প্রকল্প চালু হয়েছে। এবার সবাই চেষ্টা করছে, বিদ্যুৎ–চালিত বিমানকে কতটা গতি দেওা যায়। এ রকম একটি বিমান ‘স্পিরিট অব ইনোভেশন’। এটি একটি বৈদ্যুতিক বিমান। বিমানটি বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম বৈদ্যুতিক বিমান হিসেবে নতুন রেকর্ড করেছে।
‘স্পিরিট অব ইনোভেশন’ বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড রোলস-রয়েস লিমিটেডের তৈরি একটি বৈদ্যুতিক বিমান। ব্রিটিশ অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক রোলস-রয়েসকে সবাই বিলাহু ়ি জন্ই বেশি চেনে। তবে রোলস-রয়েস শুধু গাড়ি তৈরি করে তা কিন্তু নয়, বরং বিমান ঞ্জিন, বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা এবং মেরিন প্রোপালশন সিস্টেমও তৈরি করে এই কোম্পানি। রোলস-রয়েস বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ইঞ্জিনগুলো তৈরি করে। স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটি এক্সেলারেটিং দ্য ইলেক্ট্রিফিকেশন অব ফ্লাইট (অ্যাক্সেল) বা উন্নত বৈদ্যুতিক বিমানের প্রকল্পের অংশ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে।
স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২০ সালে, শেষ হয় ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ০২১ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে উড্ডয়ন করে রোলস–রয়েসের এয়ারস্পেসে। প্রথমবার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সফল হলেও এর সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ণয়ের জন্য একে আবার ওড়ানো হয়। ১৬ নভেম্বর স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটির ফ্লাইট অপারেশনের পরিচালক ও পাইলট ফিল ও’ডেল সর্বোচ্চ গতি তোলেন। ইংল্যান্ডের ডার্বিতে অবস্থিত রোলস–রয়েসের এয়ারস্পেস সদর দপ্তর প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক উডডয়নে স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটির গতি ঘণ্টায় ৬২৩ কিলোমিটার, অর্থাৎ ৩৮৭ দশমিক ৪ মাইল পর্যন্ত উঠেছে।
ইতিমধ্যে স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটি মোট তিনটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে। ৩ হাজার মিটার, অর্থাৎ ৯ হাজার ৮৪২ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে বিমানটি সময় নিয়েছে মাত্র ৬০ সেকেন্ড। ওই উচ্চতায় পৌঁছাতে আগে ২০২ সেকেন্ড সময় লাগত। যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামরিক বিমান পরীক্ষণ কেন্দ্ে বিমানটিক ঘণ্টায় ৩০০ মাইল গতিতে ৯ দশমিক ৩২ মাইল দূরত্বে ওড়ানো হয়। তাদের তথ্যমতে, এটি একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এ ছাড়া এটি ঘণ্টায় ৬২৩ কিলোমিটার গতিতে ১ দশমিক ৮৬ মাইল দূরত্বে অতিক্রম করারও রেকর্ড অর্জন করেছে, যা সিমেন্স ই-এয়ারক্র্যাফটচালিত এক্সট্রা ৩৩০ এলই অ্যারোব্যাটিক বিমানের ঘণ্টায় ১৯৮ মাইলের রেকর্ডটি ভেঙে দেয়।
স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানের উড্ডয়ন তথ্য-উপাত্ত বৈশ্বিক উড্ডয়ন নিযন্ত্রক সংস্থা এফআইএর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এফআইএ এই য-উপাত্ত া-বাছ করবে এবং ্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটি আসলেই বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছে কি না, তা নিশ্চিত করবে। এফআইএ বিশ্বের সব বিমান চলাচল বিষয়ে বিভিন্ন রেকর্ডের তালিকা সংরক্ষণ করে। এফআইএর অনুমোদন ছাড়া কোনো বিমান রেকর্ড স্বীকৃতি পায় না।
স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটি অ্যাক্সেল প্রকল্পের অধীন তৈরি করা প্রথম বিমান। অ্যাক্সেল প্রকল্পটি রোলস-রয়েস পরিচালিত এবং যুক্তরাজ্য সরকার–সমর্থিত। এটির জন্য অর্থায়ন করেছে অ্যারোস্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (এটিআই)। এটিআই যুক্তরাজ্য সরকারের একটি সংস্থা, যা বিমানশিল্পে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন করে। অ্যাক্সেল প্রকল্পে এটিআইয়ের অবদান প্রায় ১২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানের রং সাদা ও নীল। এই রঙের সমন্বয়টি রোলস-রয়েসের অফিশিয়াল রঙের সঙ্গে মিল রেখে করা য়েছে। এ ছাড়া লাল রঙের ব্যবহারও রয়েছে। বিমানটিতে ৪০০ কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ–চালিত ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে, যা ৫৩৫ হর্সপাওয়ারের সুপারকারের সমান শক্তি উৎপন্ন করে। এটির প্রপালশন ব্যাটারি প্যাকটি এযাবৎকালের সবচেয়ে উচ্চশক্তির। এটির ব্যাটারি ব্যবহার করে একসঙ্গে ৭ হাজার ৫০০টি স্মার্টফোন চার্জ দেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া বিমানের সব আধুনিক প্রযুক্তি এখানে ব্যবহার করা য়েছে।

স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটি জ্বালানিনির্ভর আকাশযান থেকে বেরিয়ে আসতে ও পরিবেশের ভারসাম্যের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এটি একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক বিমান, সেহেতু কার্বন নিঃসরণ করে না। রোলস-রয়েস মনে করে, স্পিরিট অব ইনোভেশন বিমানটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) ২০৫০ সালের মধ্যে নেট জিরো কার্বনে পৌঁছানোর লক্ষ্য পূরণ করতে সাহায্য করবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments