/
/
“শূন্য” থেকে শুরু: আখের ছোবড়া থেকে টেকসই স্বপ্নের গল্প
"শূন্য" থেকে শুরু: আখের ছোবড়া থেকে টেকসই স্বপ্নের গল্প
Byসাদিয়া আমিন শিলা
Published৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
৬:৫৫ অপরাহ্ণ
WhatsApp Image 2025-08-30 at 1.52.36 PM
সাদিয়া আমিন শিলা
সাদিয়া আমিন শিলা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস-এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বইপড়া ও গান পছন্দ করেন। লেখালেখি ও উপস্থাপনায় তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

উলানিয়া জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ

ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় প্রতিদিন পড়ে থাকে অসংখ্য আখের ছোবড়া। মানুষের চোখে এগুলো শুধু বর্জ্য, কেউ ফিরে,ও তাকায় না। কিন্তু সেই ফেলে দেওয়া ছোবড়াতেই এক দল তরুণ খুঁজে পেয়েছে নতুন জীবনের আলো। জন্ম দিয়েছে এক অসাধারণ উদ্যোগের—‘শূন্য’।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় শূন্যের যাত্রা শুরু হলেও, তাদের মূল কাজের ক্ষেত্র এখন ঢাকা। মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বস্তি এলাকার নারীরা হাতে বানাচ্ছেন পরিবেশবান্ধব পণ্য, আর মিরপুর কাজীপাড়ায় শূন্যর অফিস থেকে পরিচালিত হচ্ছে পুরো অপারেশন।

শূন্যর শুরু হয়েছিল খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন থেকে—“বর্জ্য কি আসলেই বর্জ্য, নাকি সম্ভাবনার অন্য নাম?” উত্তর খুঁজতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করে, আখের ছোবড়া দিয়েই তৈরি করা যায় পরিবেশবান্ধব ও সুন্দর সব পণ্য। সেই চিন্তাই আজ রূপ নিয়েছে একটি স্বপ্নে, যেখানে লক্ষ্য শুধু ব্যবসা নয় বরং একটি প্লাস্টিক-ফ্রি টেকসই সমাজ গড়ে তোলা।

তাদের হাতে তৈরি কলমদানি, শো-পিস, পেন্ডেন্ট শুধু পণ্য নয়, বরং প্রতিটি টুকরোতে লুকিয়ে আছে পরিবর্তনের গল্প। একদিকে যেমন তারা প্লাস্টিক কমাচ্ছে, অন্যদিকে সমাজের প্রান্তিক নারীদের দক্ষ করে তুলছে এবং গড়ে তুলছে সবুজ জীবিকা (Green Livelihoods)। রায়েরবাজারের নারীরা আয় করছে, আত্মনির্ভর হচ্ছে, পরিবারে মর্যাদা পাচ্ছে—শূন্যর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন এক নতুন সমাজের স্বপ্ন আঁকা হচ্ছে।

তবে এই পথচলা সহজ ছিল না। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, তহবিলের অভাব আর মানুষকে বোঝানোর লড়াই—সব মিলিয়ে যাত্রাটা ছিল কণ্টকাকীর্ণ। অনেকেই প্রথমে ভেবেছিল, “বর্জ্য থেকে ব্যবসা?” কিন্তু ধৈর্য আর বিশ্বাসের জোরে একসময় সেই সংশয় পরিণত হয়েছে প্রশংসায়।

শূন্যর জন্য বড় এক মাইলফলক এসেছে যখন তারা পেয়েছে UNDP ও FBCCI IRC-এর সহায়তা। এই স্বীকৃতি শুধু অর্থনৈতিক নয়—বরং তাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে। এখন তারা চায় উৎপাদন বাড়াতে, নতুন ডিজাইন তৈরি করতে, আর সবচেয়ে বড় কথা—আরও বেশি নারীকে দক্ষ করে তুলতে।

শূন্যের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সহ-প্রতিষ্ঠাতা জনাব সবুজ ওবায়দুল জানান, তাদের স্বপ্ন আরও বড়। আগামী ৫ বছরে শূন্য শুধু একটি স্টার্টআপ থাকবে না, হয়ে উঠবে এক সামাজিক আন্দোলন। তারা দেখতে চায়, ১০০+ নারী এই উদ্যোগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান পাচ্ছে, আর শূন্যর তৈরি পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারেও।

শূন্য বিশ্বাস করে পরিবর্তন শুরু হয় ছোট ছোট পদক্ষেপ থেকে এবং সেই পদক্ষেপই একদিন গড়ে তুলতে পারে নতুন পৃথিবী।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে পরামর্শ চাইলে তিনি বলেন,
“ভয় পাবেন না, ছোট থেকে শুরু করুন। প্রথমে হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু যদি নিজের কাজে বিশ্বাস রাখেন, একদিন সেই কাজই হয়ে উঠবে অন্যদের অনুপ্রেরণা।”

‘শূন্য’ হয়তো নামেই শূন্য, কিন্তু তাদের স্বপ্নের পরিধি অসীম। নারায়ণগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে মিরপুরের ছোট্ট অফিস আর রায়েরবাজারের নারীদের হাত ধরে গড়ে উঠছে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ—যেখানে বর্জ্য মানেই সসম্ভাবনা।