/
/
অর্থায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানি বিতর্কই কপ৩০’র প্রথম সপ্তাহে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
অর্থায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানি বিতর্কই কপ৩০’র প্রথম সপ্তাহে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
Byআল মামুন রাকিব
Published১৭ নভেম্বর, ২০২৫
১২:৩৮ অপরাহ্ণ
cop30 photo

ব্রাজিলে আমাজনের প্রাণকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৩০তম জলবায়ু সম্মেলনের (কপ৩০) প্রথম সপ্তাহ শেষ হয়েছে। এই সপ্তাহটি মূলত প্রযুক্তিগত আলোচনা এবং উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক দর-কষাকষির ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে।
‘বাস্তবায়নের কপ’ (কপ অব ইমপ্লিমেন্টেশন) হিসেবে পরিচিত এই সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দুটি প্রধান বিষয়। একটি জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা এবং অপরটি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ।
এবারের জলবায়ু সম্মেলনে প্রথম সপ্তাহের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে জলবায়ু অর্থায়ন। ‘বাকু টু বেলেম রোডম্যাপ’-এর আওতায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের যে বিশাল তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জনের উপায় নিয়ে গভীর আলোচনা হয় সপ্তাহজুড়েই।
এই অর্থায়নের জন্য নতুন ও উদ্ভাবনী উৎস খোঁজার বিষয়টি ছিল আলোচনায়। বিশেষ করে, উচ্চ-কার্বন নিঃসরণকারী খাত যেমন- বিমান চলাচল, জাহাজ শিল্প এবং জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানির ওপর ‘সলিডারিটি লেভি’ (সংহতি কর) আরোপের একটি প্রস্তাব ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। এর পাশাপাশি, গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন প্রক্রিয়া সহজ করতে ‘কান্ট্রি প্ল্যাটফর্ম’ নামক নতুন একটি ব্যবস্থা চালুর ঘোষণা দেয়া হয়।
এছাড়াও, বিভিন্ন খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতিও এসেছে। গেটস ফাউন্ডেশন জলবায়ু-সহনশীল কৃষির জন্য ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার, জলবায়ু-সহনশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সংস্থা ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং পাওয়ার গ্রিড আধুনিকীকরণের জন্য ‘ইউটিলিটিস ফর নেট জিরো অ্যালায়েন্স’ বার্ষিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অর্থায়নের পাশাপাশি এই সপ্তাহের সবচেয়ে উত্তপ্ত আলোচনার বিষয় ছিল জীবাশ্ম জ্বালানির ভবিষ্যৎ। আয়োজক দেশ ব্রাজিল, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে ৬০টিরও বেশি দেশের একটি জোট জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল ও গ্যাস) থেকে সুশৃঙ্খলভাবে সরে আসার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ‘রোডম্যাপ’ বা পথনকশা তৈরির আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে।
এই জোট চায়, সম্মেলনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা ‘কভার টেক্সট’-এ যেন এই রোডম্যাপ তৈরির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে, জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর দেশগুলোর থেকে এই প্রস্তাবের বিরোধিতাও আসছে। ফলে, এই বিষয়টি নিয়েই সম্মেলনের দ্বিতীয় সপ্তাহে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দর-কষাকষি হবে বলে ধারণা করা যায়।

এই সপ্তাহজুড়ে শুধু আলোচনাই নয় বরং বেশকিছু পদক্ষেপের ঘোষণাও দেয়া হয়। এই সম্মেলনকে ‘বাস্তবায়নের কপ’ প্রমাণের জন্য প্রথম সপ্তাহজুড়েই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের ঘোষণা এসেছে। এগুলোর মধ্যে,
জলবায়ু ও স্বাস্থ্য: ব্রাজিল সরকার প্রথম বৈশ্বিক ‘বেলেম হেলথ অ্যাকশন প্ল্যান’ চালু করেছে, যা জনস্বাস্থ্যকে জলবায়ু মোকাবিলার কেন্দ্রে নিয়ে আসবে।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন: উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তথ্য-উপাত্ত ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করার জন্য ‘এআই ক্লাইমেট ইনস্টিটিউট’  চালু করা হয়েছে।
শহুরে পদক্ষেপ: তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করার জন্য ‘বিট দ্য হিট’ নামক বৈশ্বিক উদ্যোগ এবং বর্জ্য থেকে মিথেন কমানোর জন্য ‘নো অর্গানিক ওয়েস্ট’ (এনওডব্লিউ) প্ল্যান ঘোষণা করা হয়েছে।
ন্যায্য রূপান্তর: সবুজ অর্থনীতিতে রূপান্তরের ফলে যেন কোনো শ্রমিক বা সম্প্রদায় পিছিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে ‘নতুন অর্থনীতির জন্য চাকরি ও দক্ষতা’ নামক একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যা ৬৫ কোটিরও বেশি সবুজ কর্মসংস্থান তৈরির সম্ভাবনা তুলে ধরে।

প্রথম সপ্তাহের প্রযুক্তিগত আলোচনা শেষে এখন অনেকটাই প্রস্তুত নতুন মঞ্চ, দ্বিতীয় সপ্তাহে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বেলেমে এসে পৌঁছেছেন এবং মূল রাজনৈতিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। প্রথম সপ্তাহে যে অর্থায়ন এবং জীবাশ্ম জ্বালানির বিতর্কের সূচনা হয়েছে, তার চূড়ান্ত রূপ কী হবে এবং কিভাবেই বা হবে সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছে পুরো বিশ্ব।

(বেলেম, ব্রাজিল থেকে আল মামুন রাকিব)