/
/
মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন: ভুল তথ্যের বেড়াজালে আমরা
মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন: ভুল তথ্যের বেড়াজালে আমরা
Byকারিমা ইসলাম
Published১৭ আগস্ট, ২০২৫
২:২৮ অপরাহ্ণ
Karima
কারিমা ইসলাম
কারিমা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং লাল সবুজ প্রকাশের ফিচার লেখক। সে লেখালেখির মাধ্যমে বৈশ্বিক সমস্যা, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তরুণদের সচেতন করতে কাজ করে। তার স্বপ্ন লেখার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তরুণদের সংযুক্ত করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

Untitled design (2)

তুমি যখন এই লেখাটি পড়ছো, তখন হয়তো তোমার ফেসবুক ফিডে ভেসে উঠেছে কোনো একটি চাঞ্চল্যকর খবর। অথবা হোয়াটসঅ্যাপে এসেছে এমন কোনো মেসেজ, যা তোমাকে চমকে দিয়েছে। কখনো কি ভেবে দেখেছো, এই খবরগুলোর সবগুলোই কি সত্যি কি না? অথবা মিথ্যা খবর গুলো কেনোই বা বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে?

ডিজিটাল দুনিয়ার এই অসীম সাগরে আমরা যেন এক নৌকার যাত্রী। চারপাশে তথ্যের ঢেউ। কিন্তু সেই ঢেউয়ের কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা বোঝা প্রায় অসম্ভব। আজকের এই লেখাতে আমরা সেই অদৃশ্য জালের পেছনের গল্পটাই খুঁজে দেখব, যে জালের নাম— মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন।

মিসইনফরমেশন: অনিচ্ছাকৃত ভুল, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে
মনে করো, তুমি তোমার বন্ধুর কাছ থেকে একটি খবর পেয়েছো, যে খবরটি তোমাকে চমকে দিয়েছে। তুমি এটির সত্যতা যাচাই না করেই তোমার অন্য বন্ধুদের সাথে এটি শেয়ার করে দিলে। কিন্তু পরে জানা গেল, খবরটি আসলে ভুয়া ছিল। এই যে তুমি ভুল তথ্যটি জানতে না, না জেনেই ছড়িয়ে দিয়েছো, এটাই হলো মিসইনফরমেশন। মিসইনফরমেশন এর উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, কোনো পুরোনো ছবিকে সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার ছবি হিসেবে প্রচার করা, অথবা কোনো অসম্পূর্ণ তথ্যকে সম্পূর্ণ সংবাদ হিসেবে তুলে ধরা। যেমন, এখানে তোমার যে বন্ধুটি তোমাকে প্রথমে খবরটি পাঠিয়েছিলো, সে নিজেও ভুল তথ্যের শিকার ছিলো। তার উদ্দেশ্য খারাপ না হলেও, তার শেয়ার করা তথ্যের কারণে অন্যদের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারতো।

ডিসইনফরমেশন: মিথ্যা যখন সুপরিকল্পিত
ডিসইনফরমেশন হলো এক ধরনের সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার। এটি কোনো ভুল নয়, বরং জেনে-বুঝে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি ছড়ানো হয়। ডিসইনফরমেশন এর লক্ষ্যই থাকে জনমতকে প্রভাবিত করা, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা, সমাজে বিভেদ তৈরি করা, অথবা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হেয় করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো অথবা কোনো পণ্যের বাজার নষ্ট করতে সেই বিষয়ে গুজব ছড়ানো। ডিসইনফরমেশন এর ক্ষেত্রে মূল হাতিয়ার হিসাবে মানুষের আবেগ এবং ভয়কে ব্যবহার করা হয়। এটি মিসইনফরমেশন এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর।

চলো তাহলে জেনে নিই, কেন আমরা এই মিসইনফরমেশন বা ডিসইনফরমেশন এর ফাঁদে পড়ি?
১. ডিজিটাল দুনিয়ার দ্রুত গতি: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি খবর এখন এতই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে, সেটির সত্যতা যাচাই করার পূর্বেই তা ভাইরাল হয়ে যায়, এবং এটির মাধ্যমে মানুষ নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়।

২. আবেগ এবং পক্ষপাত: মানুষ সাধারণত সেই খবরটিই বেশি বিশ্বাস করে, যা তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে মিলে যায়। ফলে, এই ‘কনফার্মেশন বায়াস’ ভুল তথ্যকে আরও দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
৩. অর্থনৈতিক প্রলোভন: ডিজিটাল দুনিয়ায় কিছু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ক্লিকবেইট এবং ভিউ বাড়ানোর জন্য চাঞ্চল্যকর অথচ মিথ্যা খবর তৈরি করে যাতে তারা আর্থিক ভাবে লাভবান হয়।

৪. রাজনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য: বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ডিসইনফরমেশনকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়।

তাহলে এই মিসইনফরমেশন ও ডিসইনফরমেশন এর ঢেউ থেকে কি বাঁচার কোনো উপায় নেই? হ্যাঁ, আছে। চলো তাহলে দেখি সেগুলো কি কি—
১. হুট করে বিশ্বাস নয়: কোনো খবর দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে তা বিশ্বাস করবে না, বরং একটু সময় নিয়ে ভাবো, খবরটি আসলেই সত্যি কি না।
২. উৎস যাচাই: খবরটি কোথা থেকে এসেছে তা যাচাই করো। নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যম থেকে খবরটি এসেছে, নাকি কোনো অপরিচিত পেজ থেকে?

৩. একাধিক উৎস: একটি খবরকে কেবল একটি উৎস থেকেই বিশ্বাস করবে না। একই খবর অন্য কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখবে।
৪. নিজের বিবেককে কাজে লাগাও: কোনো খবর শেয়ার করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করো— আমি কি নিশ্চিত যে এটি সত্যি? আমার এই শেয়ার কি সমাজে কোনো খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে?

যদি উত্তরটি ‘না’ হয়, তাহলে অবশ্যই সেই খবরটি শেয়ার করা থেকে নিজেকে বিরত রাখো। কারণ, তোমার একটি শেয়ার বা লাইক-ই সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। তাই, তথ্যের এই অবাধ প্রবাহে আমরা যেন কখনোই সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত না হই।