

কী ভাবছেন, এরা রান্নার পানি নিচ্ছে? না, এরা রান্নার পানি নিচ্ছে না। বরং জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ জলের খোঁজে বেরিয়েছে। এই দৃশ্যটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন, কিন্তু এই করুণ বাস্তবতাই শরণখোলার মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী।
গত রমজান মাসে আমি, বিনিতা আপু আর মুমু আপু লাল সবুজ সোসাইটির পক্ষ থেকে শরণখোলা গিয়েছিলাম একটি পিএসএফ (Pond Sand Filter) মেরামত করতে। সেখানে গিয়ে আমরা পানিকে শুধু তৃষ্ণা মেটানোর উপকরণ হিসেবে নয়, বরং বেঁচে থাকার এক অপরিহার্য শর্ত হিসেবে দেখতে পাই।
শরণখোলার মানুষের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হলো বিশুদ্ধ পানির জন্য যুদ্ধ। ‘কাউ’ নদীর লবণাক্ত পানি, বাড়ির পাশের পুকুরের পলিযুক্ত নোংরা জল অথবা বর্ষাকালে বৃষ্টির উপর ভরসা করে তাদের জীবন চলে। বর্ষায় কিছুটা স্বস্তি মিললেও, গ্রীষ্মে যখন পুকুর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, তখন তাদের কষ্টের শেষ থাকে না। মাইলের পর মাইল খালি পায়ে হেঁটে তাদের পানি সংগ্রহ করতে হয়। বিশেষ করে মা ও ছোট বোনেরা ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত শুধু এক ফোঁটা বিশুদ্ধ পানির জন্য ছোটাছুটি করেন।

পিএসএফ মেরামতের সময় এক ছোট্ট মেয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। তার নিষ্পাপ চোখে ছিল একরাশ স্বপ্ন। সে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু প্রতিদিন মাইলের পর মাইল খালি পায়ে পানি আনতে গেলে তার বই পড়ার বা স্বপ্ন দেখার সময় কোথায়? এই প্রশ্নটা আমাকে খুব ভাবিয়েছে। শুধু ওই মেয়েটিই নয়, শরণখোলার শত শত শিশু এই একই স্বপ্ন দেখে, কিন্তু পানির তীব্র সংকট তাদের প্রতিটি স্বপ্নকে যেন গলা টিপে হত্যা করছে।
আমরা পুরো শরণখোলা ঘুরে দেখেছি। প্রতিটি ঘরে ঘরে পানির অভাব যেন এক নীরব কান্নার প্রতিধ্বনি। আমাদের কাছে যা একটি সহজলভ্য পানীয়, তাদের কাছে সেটাই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। শরণখোলায় গিয়ে আমরা শিখেছি, জীবন ধারণের জন্য পানি কতটা জরুরি। আর এই সত্যটা কেবল তারাই জানে যারা প্রতিদিন এর জন্য লড়াই করে বেঁচে আছে।

এই এক টুকরো লেখা শরণখোলার মানুষের সংগ্রামের সামান্য অংশমাত্র। তাদের জীবনের এই বাস্তবতাকে অনুভব করার জন্য শুধু এক গ্লাস জলের কথা ভাবুন, যা আপনার কাছে খুব সহজে আসে কিন্তু তাদের কাছে তা এক অপ্রাপ্য স্বপ্ন।