

২১ জুলাই আমার জন্মদিন। বরাবরের মতো দিনটি নিজের মতো কাটানোর ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এ বছর ভাগ্যে অন্যকিছু লেখা ছিল—যা আমি কোনোদিন ভাবিনি। বেলা ১২টার পর ফেসবুকে লগইন করতেই চোখে পড়ে মাইলস্টোন স্কুলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর। প্রতিটি স্ক্রলে ভেসে আসছিল বিভৎস দৃশ্য—আগুনে দগ্ধ শিশুদের শরীর, পুড়ে যাওয়া স্কুল ভবন, অসহায় বাবা-মায়ের আর্তচিৎকার।
আমি লাল সবুজ সোসাইটির একজন স্বেচ্ছাসেবক। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকা সম্ভব হয়নি। প্রথমদিনেই আমি, মাহফুজুর রহমান ফাহাদ ও ইমতিয়াজ রাহাত উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সেখানে গিয়ে শুনতে পাই চারপাশে একটাই শব্দ—“রক্ত লাগবে, রক্ত!” যদিও সেদিন রক্তের প্রয়োজন হয়নি, আমরা সড়কে সারাদিন দাঁড়িয়ে মানুষ সরানো ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের পথ সুগম করি।
পরদিন সকালে আমি, ফাহাদ ও আমাদের টিমমেট নাঈম জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যাই। সেখানে সরাসরি আহতদের দেখতে না পারলেও দগ্ধ শিশুদের জন্য অপেক্ষায় থাকা অভিভাবকদের সাথে কথা বলি। চিকিৎসা সেবা নিয়ে তাদের অভিযোগ ছিল না, তবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আমরা লিস্ট করে নিই এবং পরদিন তাদের জন্য খাবার, পানি, খাবার স্যালাইন ও বিশ্রামের জন্য চাঁদর সরবরাহ করি।
তৃতীয় দিন আমি, ফাহাদ, নাঈম, ফারহান ও তানজীম আবার হাসপাতালে যাই। আইসিইউ’র সামনে এক মা কোনো কথা বলেন না, শুধু নীরবে মাদুর খুঁটতে থাকেন। আমি তার পাশে বসি, হাত ধরতেই তিনি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরেন আর দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। তার ছোট্ট সন্তান তখন আগুনে ঝলসানো শরীর নিয়ে বেডে শুয়ে।
অন্যদিকে এক বাবা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর চাপা কান্না ভেঙে হুহু করে কেঁদে উঠলেন। আমাদের সঙ্গী নাঈম তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এছাড়া পঞ্চম তলায় গিয়ে এক বৃদ্ধা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই মুহূর্তগুলো আজও ভোলা যায় না। প্রত্যেক অভিভাবকের চোখে একটাই প্রার্থনা—“ছোট্ট প্রাণগুলো যেন বেঁচে ফিরে আসে।