/
/
/
রাঙামাটিতে আত্মরক্ষার শিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে প্রতিষ্ঠান
রাঙামাটিতে আত্মরক্ষার শিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছে যে প্রতিষ্ঠান
Byসাদিয়া আমিন শিলা
Published৭ অক্টোবর, ২০২৫
১১:০৬ পূর্বাহ্ণ
WhatsApp Image 2025-08-30 at 1.52.36 PM
সাদিয়া আমিন শিলা
সাদিয়া আমিন শিলা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস-এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বইপড়া ও গান পছন্দ করেন। লেখালেখি ও উপস্থাপনায় তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

Untitled design (2)

রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় কারাতে শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে ফুরোমোন কারাতে দো। ২০১৪ সালে তিনজন কারাতেকা মিলে শুরু করেন এই পদযাত্রা, যা আজ অতিক্রম করেছে এক দশকের পথ। এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ইতিমধ্যেই ২৩ জন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন থেকে ব্ল্যাক বেল্ট প্রথম ড্যান অর্জন করেছে, আরও ১০ জন প্রস্তুতি নিচ্ছে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য।

প্রধান প্রশিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন যশস্বী চাকমা, যিনি ১১ বছর ধরে রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্তর্গত প্রফেসর কুমার সুমিত রায় জিমনেশিয়ামে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা করছেন। ১৯৯৮ সালে কারাতের সাথে তাঁর যাত্রা শুরু হলেও প্রশিক্ষকের পথে আসার গল্প অন্যরকম। সেই গল্প জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা যখন কারাতে শিখতাম তখন নিয়মিত প্রশিক্ষকের অভাব ছিল। ঢাকার ট্রেইনারদের এনে ট্রেনিং নিতে হতো। এই অভাব থেকেই মূলত প্রশিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে জন্ম নেয়। পরে আমার গুরু শেখ ইসানুর রহমান এহসান আমাকে কারাতে শিক্ষক হতে উৎসাহ দেন।”

যাত্রার শুরুটা সহজ ছিল না। পরিবারের সমর্থন থাকলেও কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি। তবে দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি এই জায়গায় পৌঁছেছেন। শুরুতে অনেক অভিভাবক সন্তানদের কারাতে শেখাতে আগ্রহী ছিলেন না। বরং নিরুৎসাহিত করতেন। তবে সময় বদলেছে। এখন অনেকেই সন্তানদের আত্মরক্ষার জন্য ও মানসিক দৃঢ়তার জন্য কারাতে শেখাতে আগ্রহী।

ফুরোমোন কারাতে দো- র প্রশিক্ষক জানান, শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য পদক জিতেছে। অনেকে বিকেএসপির মতো প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পেয়ে নিজেদের প্রতিভা ছড়িয়ে দিয়েছে। এতে রাঙামাটির নাম যেমন উজ্জ্বল হয়েছে, তেমনি নতুন প্রজন্ম আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে।

কারাতের গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও জানান, ‘শারীরিক সক্ষমতা, মনোবল বৃদ্ধি এবং আত্মরক্ষার কৌশল শেখার জন্য কারাতে সবার জন্যই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি প্রতিদিনের মতো ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে কারাতে শিক্ষা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর স্বপ্ন রাঙামাটির দশটি উপজেলায় কারাতের বীজ বপন করা। সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেলে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, অন্যদিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সঠিক পথের দিকনির্দেশনা পাবে।

শেষে তিনি মন্তব্য করেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যদি কারাতে প্রশিক্ষণকেও উন্নয়নের অংশ করা যায়, তবে তা হবে আরও টেকসই। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজন কারাতেকা থাকলে সে শুধু নিজেকে নয়, পরিবার ও সমাজকেও অনিয়ম ও অপরাধ থেকে রক্ষা করবে।