

আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
হেমন্তের সকালে ধানের শীষে জমে থাকা শিশির বিন্দু যেন এক অনন্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কুড়িগ্রামের কৃষিজমিতে। চারদিকে শুধু সোনালি ধানের সমারোহ-মাঠের পর মাঠ জুড়ে যেন সোনার ঢেউ। ধান কাটার ব্যস্ততা আর নবান্নের প্রস্তুতিতে মুখর পুরো জেলা। কৃষক-কৃষাণির মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় এবার আগাম জাতের আমন ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ধান ঘরে তোলার পর একই জমিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজসহ অন্যান্য শীতকালীন ফসল চাষ করে লাভবান হওয়ার আশায় রয়েছেন তারা। ফলে তাদের মুখে যেন সত্যিকার অর্থেই ‘সোনার ফসল’ ফিরে এসেছে।
হেমন্তের শুরু থেকেই কৃষকরা পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ধানে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে তাদের গোলা। অগ্রহায়ণের এই শস্যপ্রাপ্তি কৃষকদের মনকে ভরিয়ে দেয় আনন্দে, আর সেই আনন্দই উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে।
নবান্নকে ঘিরে গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে চলে নানা আয়োজন-নতুন চালের পিঠা-পুলি, পায়েস, খিচুড়িসহ বাহারি খাবার তৈরির ধুম পড়ে যায়। উৎসবের আবহ ছড়িয়ে পড়ে হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের ঘরে। এটি হয়ে ওঠে একসাথে খুশি ভাগ করে নেওয়ার একটি সার্বজনীন উৎসব।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “চলতি আমন মৌসুমে কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের ধান হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন ভালো হয়েছে।”
সোনালি ধানের হাসি এখন শুধু মাঠে নয়, কৃষকের চোখেমুখেও। আর এই হাসি, এই উৎসবই যেন বাংলার চিরন্তন কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির প্রমাণ বহন করে।