রাজধানী ঢাকার বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও সমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে আহসান মঞ্জিল। দৃষ্টিনন্দন রাজ প্রাসাদতুল্য আহসান মঞ্জিল বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত। এটি ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নবাব পরিবারের বাসভবন ও সদর কাচারি ছিল। সুরম্য এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন। ঢাকা মহানগরীর উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ক্রমবিকাশের বহু স্মরণীয় ঘটনাসহ অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মৃতি বিজরিত এই ‘আহসান মঞ্জিল’। আহসান মনঞ্জিল দেখতে প্রতিদিন শি-বিদেশি অসংখ্য দর্শনার্থী দেখতে আসেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে জালালপুর পরগনার (বর্তমান ফরিদপুর–বরিশাল) জিদার শেখ ইনায়েত উল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে একটি বাগান বাড়ি তৈরি করেন। পররতীকালে তার পুত্র বাগান বাড়িটি এক ফরাসি বণিকের কাছে বিক্রি করে দেন। ফরাসিরা বাণিজ্য কুটির হিসেবে আহসান মঞ্জিলটি ব্যবহার করতেন। ১৮৩০ সালে বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এই কুঠিটি ক্রয় পূর্বক সংস্কার করে বসবাস শুরু করেন। নওয়াব আবদুল গণি আহসান মঞ্জিলের প্রবেশ দ্বার। নওয়াব আবদুল গণি ১৮৬৯ সালে আহসান মঞ্জিলটি নতুন করে নির্মাণ করেন। ভবনটির অনেক পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ফলে পুরনো সেই ভবনের কোনো অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।
নতুন ভবন নির্মাণের পর তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসান উল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। সমগ্র আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব পাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন বা রংমহল।
এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে সুন্দর। একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম খিলান আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলার দরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে। ব এ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
দক্ষিণ পাশে রয়েছে খোলা চত্বর । তারপর বুড়িগঙ্গা নদী । প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ভ্রমণ ও বিনোদন প্রিয় শত শত মানুষের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠে এ চত্বর । দোতলা থেকে সিড়ি চলে গেছে নদীর ঘাটে । প্রায় পাঁচ একর জমিসহ ঐতিহাসিক এই ভবনটি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করে জাদুঘরে রুপান্তর করেন। জাদুঘরের মোট ২৩টি গ্যালারীতে ঢাকার নবাবদের জীবনযাত্রা ও পরিিতি তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ গ্যালারীটি পেরিয়ে দেখা যায় আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলার বারান্দা। এ বারান্দায় বসে নবাব বিকাল বেলা বুড়িগঙ্গার বুকে পাল তুলে বয়ে যাওয়া নকার দৃশ্য উপভোগ করতেন। বৈচিত্রময় এই প্রাসাদের আনে উদাস চাহনীতে তাকিয়ে থাকলে মানস পটে ভেসে উঠে অতীত ইতিহাস ও ঢাকার নবাবদের বিলাসী জীবনের ছবি।। প্রতিদিন দেশী বিদেশী প্রচুর দর্শক আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দেখেত আসে । দর্শকদের কৌতুল নিবারণের জন্য রয়েছে হাতীর দাঁতসহ মাথার বিরাট কঙ্কাল, কাঠ ও শ্বেত পাথরের গোল টেবিল, প্রাচীন রৌপ্য মুদ্রা, কারুকাজ খচিত কাঠের পার্টিশন, স্ফকটিকের তৈরি টেবিল, নবাবদের বযবহৃত তৈজসপত্র, আটটি কচ্ছপের পায়া যুক্ত টেবিল ইত্যাদি। বৃহস্পতিবার ছাড়া সপ্তাহের বাি য়িন জাদুঘর দশকদের য খোলা থাকে।