ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাটে অবস্থিত। ১৫ শতকের দিকে খান জাহান আলী নামের প্রখ্যাত সুফি দরবেশ এ মসজিদটি নির্মা করেন। প্রত্নস্থলটিকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। মসজিদটিতে ৮১টি গম্বুজ রয়েছে। এটিকে ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয়, এর নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তবে জনশ্রুতি আছে, সাতটি করে সারিবদ্ধ গম্বুজ আছে বলে এ মসজিদের নাম ছিল আসলে সাত গম্বুজ। মানুষের মুখে মুখে ষাট গম্বুজ হয়েছে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০টি স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলে ‘ষাট খাম্বা’ কালে কালে ‘ষাটগম্বুজ’ হয়ে উঠেছে।
দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ খুব প্রসিদ্ধ। সারা বছর এখানে পর্যটকদের আনা চোখে পড়ার মতো। শীতকালে এ অঞ্চল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
প্রাচীন ইমারতের চোখধাঁধানো নির্মাণশৈলী বিস্মিত করে তোলে সকলকে। মসজিদের উত্তর–দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব–পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভেতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। এ মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে, স্থানীয় ভাষায় যা খাম্বা নামে পরিচিত ছিল। প্রতি সারিতে ১০টি করে উত্তর থেকে ক্ষিণ ছয়টি সারিতে এই স্তম্ভগুলো দাঁড়ানো। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু পাঁচটি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেওয়া। এই ৬০টি স্তম্ভ এবং চারপাশের দেওয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ।
জনশ্রুতি আছে যে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য সমুদয় পাথর সুদূর চট্টগ্রাম, মতান্তরে ভারতের ওডিশার রাজমহল থেকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতাবলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। ইমারতটির গঠনবৈচিত্র্যে তুঘলক স্থাপত্যের বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এ বিশাল মসজিদের চারদিকে প্রাচীর আট ফুট চওড়া, এর চার কোনে চারটি মিনার আছে। দক্ষিণ দিকের মিনারের শীর্ষে কুঠিরের নাম রোশনাই কুঠির এবং এ মিনারে ওপরে ওঠার সিঁড়ি আছে। মসজিদটি ছোট ইট দিয়ে তৈরি, এর দৈর্ঘ্য ১৬০ ফুট, প্রস্থ ১০৮ ফুট, উচ্চতা ২২ ফুট। মসজিদের সম্মুখ দিকের মধ্যস্থলে একটি বড় খিন এর দু পাশে পাঁচটি করে ছোট খিলান আছে। মসজিদের পশ্চিম দিকে প্রধান মেহরাবের পাশে একটি দরজাসহ ২৬টি দরজা আছে। মসজিদ দর্নীয় স্থানে রূপান্তরিত হওয়ায় সামনের আঙিনাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি ফুল গাছের সমারোহে। এসব গাছের নানা রকম ফুলও দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মনে দোলা দিতে থাকে।
াট গম্বুজের পশ্চিম দিকে বিরাট একটি দিঘি আছে। দিঘিটি অলৌকিক কোনো জলাধার মনে হয়। কারণ, এর মধ্যে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে জন্ম নেওয়া শাপলা মানুষকে যেমন বিমোহিত করে, ঠিক তেমনি জলের গভীরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে অজানা এক শঙ্কা নাড়া দেয় মে; পুরোনো শেওলা শাপলার লতাকে কী ভয়ংকরভাবে জড়িয়ে আছে, ভাবলেই গা শিওরে ওঠে। অদ্ভুত কালো পানি যেন ভয়ের দূত! দিঘির এই অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যেও অন্য রকম একটি ভালো লাগা আছে অবশ্যই—দর্শকই শুধু এর অনুভব করতে পারেন।