/
/
/
মেহেন্দিগঞ্জে মেঘনার তীরে উলানিয়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস
মেহেন্দিগঞ্জে মেঘনার তীরে উলানিয়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস
Byনাঈম শিকদার
Published৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১২:১৫ অপরাহ্ণ
503612616_689380597300235_8885718071973755637_n
নাঈম শিকদার
নাঈম শিকদার লাল সবুজ প্রকাশের সক্রিয় সদস্য এবং সহকারী কো-অর্ডিনেটর। তার শখ ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি ও এডিটিং, পাশাপাশি ভ্রমণ করে নতুন মানুষ ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত হওয়া। সে তৃণমূলের মানুষের কথা তুলে ধরতে আগ্রহী।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

Untitled design (37)

বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত উলানিয়া জমিদার বাড়ি। এটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হিসেবে যুগের পর যুগ এই স্থানে দারিয়ে আছে। প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়ি শুধু স্থানীয় মানুষকেই নয়, দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী ও পর্যটককে মুগ্ধ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এ কারণে স্থানটি এখন একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে।

উলানিয়া জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করলেই প্রথমেই চোখে পড়ে একটি বিশাল মসজিদ, যা তাজমহলের আদলে নির্মিত। এ মসজিদটি বর্তমানে “উলানিয়া জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ” নামে পরিচিত। চমৎকার শৈল্পিক কারুকাজে নির্মিত এই মসজিদ স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন। এরপর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলে মূল জমিদার বাড়িটি চোখে পড়ে। বাড়িটির নকশা ও স্থাপত্যশৈলী এতটাই নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর যে প্রথম দেখায় এটিকে ৩০০ বছরের পুরোনো স্থাপনা মনে হয় না।

এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস প্রায় ১৭০০ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ থেকে জানা যায়, এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুবেদার হানিফ। তিনি ছিলেন সৈনিক পদে কর্মরত এবং তার পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন দূর পারস্য দেশ থেকে। সে সময়ে মেহেন্দিগঞ্জ অঞ্চলটি ওলন্দাজ দস্যু, মগ ও ফিরিঙ্গিদের অত্যাচারে জর্জরিত ছিল। তারা সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে শোষণ ও নির্যাতন করত। তখন সুবেদার হানিফকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এদেরকে প্রতিহত করার। তিনি দৃঢ় হাতে দস্যুদের দমন করে শান্তি ফিরিয়ে আনেন এবং এখানেই স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তার বংশধররা এখানকার জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

উলানিয়া জমিদার বাড়ি শুধু রাজনৈতিক বা সামাজিক ইতিহাসের সাক্ষী নয়, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও এর অবদান রয়েছে। এই পরিবারের উত্তরসূরিদের মধ্যে ছিলেন দুইজন খ্যাতনামা কবি। তাঁদের একজন একুশে পদকপ্রাপ্ত মরহুম কবি আবদুল গাফফার চৌধুরী, যিনি অমর গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” রচনার জন্য চিরস্মরণীয়। অন্যজন ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক মরহুম আসাদ চৌধুরী। তাঁদের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং উলানিয়া জমিদার বাড়ির নামকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।

বর্তমানে এই জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় রয়েছে। এখানে নিয়মিত সংস্কার কাজ চলছে। সংস্কার সম্পন্ন হলে এটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তখন আরও বেশি দর্শনার্থী এসে এই ঐতিহাসিক স্থাপনার সৌন্দর্য ও ইতিহাস প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উলানিয়া জমিদার বাড়ি আজও ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে। এটি শুধু মেহেন্দিগঞ্জ নয়, পুরো বরিশাল তথা বাংলাদেশের জন্য এক অমূল্য সম্পদ।