/
/
/
কি আছে দেশের একমাত্র পানি জাদুঘরে
কি আছে দেশের একমাত্র পানি জাদুঘরে
Byজহিরুল ইসলাম
Published৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১১:২১ পূর্বাহ্ণ
WhatsApp Image 2025-08-14 at 4.21.18 PM
জহিরুল ইসলাম
মো. জহিরুল ইসলাম পটুয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এবং লাল সবুজ প্রকাশের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। সে লাল সবুজ সোসাইটিতে ভলান্টিয়ার হিসেবে সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় এবং লেখালেখি, বই পড়া ও ভ্রমণ তার শখ। ভবিষ্যতে সে একজন দক্ষ সাংবাদিক ও লেখক হয়ে সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখতে চায়।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

উলানিয়া জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ (4)

পানি জাদুঘর, নামটি শুনলেই মনে হয় পানির আবার জাদুঘর হয়। হ্যাঁ হয়, এই জাদুঘরে দেশ-বিদেশের নানা নদ-নদীর পানি আছে এজন্যই এটিকে বলা হয় পানি জাদুঘরে। আর কেনই বা এটি বিখ্যাত সেই বিষয়ে জানতে হলে নিচের অংশটি পড়ুন।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। প্রাচীনকাল থেকে এই দেশের বসতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও জীবিকা গড়ে উঠেছে নদীকে ঘিরে। নদী শুধু ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নয়, বরং বাঙালির সংস্কৃতির অন্তর্গত এক প্রাণশক্তি। সেই নদী-নির্ভর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণের জন্য পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে একশনএইট বাংলাদেশ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দেশের একমাত্র পানি জাদুঘর।

২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘরে কাচের স্বচ্ছ জারে সংরক্ষণ করা হয়েছে বাংলাদেশের ৮৭টি নদীর পানি। প্রতিটি জারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নদীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এবং স্থানীয় মানুষের জীবন-সংস্কৃতির নানা তথ্য। শুধু পানিই নয়—জাদুঘরটি যেন নদী-সংস্কৃতির এক দলিলঘর।

টিন-শেড ভবনের প্রায় ৫০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে দুই তলায় সাজানো এই ক্ষুদ্র প্রদর্শনীতে রয়েছে নদীকে ঘিরে মানুষের ব্যবহার্য নানা সামগ্রী। প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে মাছ ধরার জাল, ঝাঁকি, চাঁই, কাঁকড়া ধরার সরঞ্জাম, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশের ঝুড়ি, কাঠের নৌকার প্রতিরূপসহ বহু ঐতিহ্যবাহী উপকরণ।
দেয়ালজুড়ে টাঙানো ছবি ও আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছে নদী-খাল, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, জেলে ও কুমোরদের জীবন, এবং উপকূলীয় মানুষের নিত্যদিনের সংগ্রাম। নদী ও পানির সঙ্গে সম্পর্কিত লোকজ ঐতিহ্যকেও এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

পানি জাদুঘরে শুধু বস্তু প্রদর্শনীই নয়, সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশের শত শত নদীর ইতিহাস। পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত নদীর তথ্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাবের আলোকচিত্রও দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়। পানি জাদুঘরের কিউরেটর,লিপি মিত্র বলেন , “এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নদীকে রাজনৈতিক সীমার বাইরে মানবিক ও পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে নতুনভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা। নদী শুধু সম্পদ নয়, বরং মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত—এই বোধ জাগানোই আমাদের লক্ষ্য।”

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা অনেকেই আসেন এই পানি জাদুঘরে। পর্যটক মুহাম্মদ বাইজিদ বলেন, “কুয়াকাটায় ঘুরতে এসে স্থানীয়দের কাছ থেকে এই জাদুঘরের কথা শুনলাম। ভেতরে ঢুকে দেখলাম নদী নিয়ে অনেক তথ্য আর ইতিহাস আছে। সত্যিই এটি দেখার মতো জায়গা।”
স্থানীয়দের মতে, সৈকতকেন্দ্রিক পর্যটনে বৈচিত্র্য আনতে এই জাদুঘর ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থী, গবেষক থেকে শুরু করে সাধারণ পর্যটক—সবার কাছেই এটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়কদের মতে, নদী শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, এটি মানুষের সংস্কৃতি ও অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আজকের দিনে নদীগুলো দখল, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে হুমকির মুখে। পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য হলো এই সংকট সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং নদী রক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।

পানি জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে মঙ্গলবার। প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১০ টাকা, যাতে সব শ্রেণির মানুষ সহজেই ঘুরে দেখতে পারেন।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নদী রক্ষার বার্তা একসঙ্গে ধারণ করছে এই পানি জাদুঘর। তাই কুয়াকাটায় ভ্রমণে গেলে সৈকতের পাশাপাশি একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিতে অবশ্যই ঘুরে দেখা যেতে পারে কলাপাড়ার এই অনন্য পানি জাদুঘর।