

পিপাসা মেটাতে আমরা যেটিকে সবচেয়ে নিরাপদ ভেবে নিই, সেই বোতলের পানিই ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে বিষ ঢালছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতিদিন মানুষ অজান্তেই বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে গ্রহণ করছে, যার বড় একটি অংশ আসে প্লাস্টিক বোতলের পানির মাধ্যমেই।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্লাস্টিক বোতলে থাকা রাসায়নিক উপাদান বিসফেনল-এ (BPA) সূর্যের আলো বা তাপে পানিতে মিশে যায়। এই উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, প্রজননক্ষমতা কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এক লিটার বোতলের পানিতে গড়ে ২ লাখেরও বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এমনকি বাংলাদেশের কিছু শহরেও করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বোতলজাত পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্ষুদ্র কণাগুলো কিডনি ও লিভারে জমে শরীরের কোষে প্রদাহ সৃষ্টি করে যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দেয়। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ প্লাস্টিকের কণা প্লাসেন্টা পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রূণের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
এ গবেষণাগুলোয় আরও উঠে এসেছে, ফথালেট নামক আরেকটি রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতো আচরণ করে, ফলে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন কমে যায় এবং নারীদের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক বোতলে গরম পানি বা চা রাখা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস। উচ্চ তাপমাত্রা BPA ও ফথালেটের বিক্রিয়াকে দ্রুত করে যার ফলে পানি আরও বেশি বিষাক্ত হয়ে ওঠে।
তবে এর সমাধান খুব কঠিনও নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লাস বা স্টিলের বোতলে পানি রাখা সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প।’
বর্তমানে আমরা হয়তো বোতলের পানি পান করে সতেজ হচ্ছি বলে মনে করি, কিন্তু আসলে অদৃশ্য বিষ আমাদেরই শরীরে ঢুকছে প্রতিদিন। এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ফেলবো।
আমরা সবাই জানি যে, পানি জীবনের প্রতীক কিন্তু এই ‘বোতল নির্ভরতা’ আমাদের জীবনকেই ঝুঁকিতে ফেলছে। তাই সময় এসেছে প্রকৃতির নিরাপদ উৎসের দিকে ফিরে যাওয়ার। এ নিয়ে সচেতন হই জীবনকে রাখি নিরাপদ।