

তোমরা কি জানো বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ একটি প্রথমসারির দেশ? জার্মানওয়াচের ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১’’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭ম এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির দিক থেকে অবস্থান পঞ্চম। এবং ২০২৪ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান নবম (সিপিডি ক্লাইমেট উইক-২০২৫)। অথচ ২০১৮ সালেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮তম।
আমরা প্রায়শই শুনে আসছি যে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। কেন ঘটছে, এর কারণ কী? এসব জানতেও ইচ্ছে করে। তবে এসব জানার আগে আমাদের জানতে হবে জলবায়ু কি এবং জলবায়ু পরিবর্তনই বা কি। চলো জেনে নিই।
জলবায়ু বলতে মূলত বোঝায় কোনো একটি এলাকার বা একটি জায়গার বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার গড়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট এলাকার দীর্ঘদিনের গড় আবহাওয়াকেই বলা হয়ে থাকে জলবায়ু।
এবারে জানব জলবায়ু পরিবর্তন কী। কোনো জায়গার ৩০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ে গড় জলবায়ু দীর্ঘমেয়াদি ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে বলা হয়ে থাকে জলবায়ু পরিবর্তন।
এবারে আসি জলবায়ু পরিবর্তন কেন হয় তা নিয়ে। পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ দুইটি। একটি হচ্ছে মনুষ্যসৃষ্ট কারণ আর অন্যটি প্রাকৃতিক কারণ। মনুষ্যসৃষ্ট কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন, বন উজার, শিল্পায়ন ও নগরায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘাটতি, কৃষি কার্যক্রম। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া, সৌর বিকিরণের মাত্রা, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান বা পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, প্রাকৃতিক গ্রিনহাউজ নির্গমন ইত্যাদি।
তোমরা জেনে আশ্চর্যান্বিত হবে যে মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকান্ডের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। পৃথিবীর এই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে মনুষ্যজনিত গ্রিনহাউজ গ্যাস। গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট স্টাটিস্টা ২০২১ এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে বলে জানায় মেট অফিস।
আচ্ছা, চলো এবার জলবায়ু পরিবর্তনে মনুষ্যজনিত কারণগুলো সম্পর্কে জানা যাক,
গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন: মানুষের কার্যকলাপের মাধ্যমে যেমন শিল্প উৎপাদন, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, যানবাহন, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি বিপুল পরিমান কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন করে। এর ফলে এ গ্যাসগুলো বায়ুমন্ডলে একটা লেয়ার তৈরি করে এবং তাপকে আটকে রাখে, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়।
বন উজাড়: বন কার্বন শোষণ করে কিন্তু কৃষি জমি, নগরায়নের ফলে গাছপালা কাটতে হচ্ছে। একারণে বায়ুমন্ডলে কার্বনের পরিমাণ বৃদ্ধি যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি প্রভাবক।
শিল্পায়ন ও নগরায়ন: শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে জ্বালানি ব্যবহার বাড়ছে, গাছপালা কাটতে হচ্ছে, কারখানার ধোয়া ও বর্জ্য নির্গমন বাড়ছে ফলে জলবায়ুর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
কৃষি কার্যক্রম: কৃষিতে অধিক উৎপাদন ও পশুপালনে নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। যার ফলে ক্ষতিকর মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন হয় যা জলবায়ুতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঘাটতি: বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালি, কলকারখানার বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হয় যেখানে প্রচুর পরিমানে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়। আবার পৃথিবীর জুড়েই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। ল্যান্ডফিল বা ডাম্পিং থেকে প্রচুর ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয় যা পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
আবার পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে প্রাকৃতিক বহু কারণও রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে পৃথিবীর অক্ষরেখার দিক পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, সৌর বিকিরণের মাত্রা পরিবর্তন, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান পরিবর্তন, মহাসাগরীয় স্রোত বা Ocean Circulation System এর পরিবর্তন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে তাপ ও আর্দ্রতার বন্টনে প্রভাব ফেলে। আবার প্রাকৃতিকভাবে তৈরি গ্রিনহাউজ গ্যাসও জলবায়ু উষ্ণকরণে ভূমিকা রাখে।
এখন সময় সবার সচেতন হওয়া। জানতে হবে কি কারণে জলবায়ুর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটছে এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায়। একসাথে মিলে গড়তে হবে বাসোপযোগী একটি নির্মল বসুন্ধরা।