/
/
/
শীতের ছোঁয়া নিতে ঘুরে আসো উত্তরবঙ্গ
শীতের ছোঁয়া নিতে ঘুরে আসো উত্তরবঙ্গ
ByMozammel Haque Hridoy
Published১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
৭:০৮ অপরাহ্ণ
1762172769579
Mozammel Haque Hridoy
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে লাল সবুজ প্রকাশের সাব-এডিটর হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সিজে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ‘Northify’ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও দৈনিক দেশ রূপান্তরের বেরোবি প্রতিনিধি ছিলেন।

কনটেন্টটি শেয়ার করো

Copied!

সর্বশেষ

winter in rp

নতুন একটা কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, ‘যদি শীতের আমেজ চাও তবে উত্তরবঙ্গে চলে যাও’। বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারি, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধাসহ নানা বেশ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সর্বনিম্ন। দেশে শীতের আগমন ঘটে উত্তরবঙ্গের মাধ্যমে।
ডিসেম্বরের মাঝে এসেও যখন রাজধানীতে শীতের ছোঁয়া নেই বললেই চলে ঠিক তখন উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে হাড় কাঁপুনি শীত চলে এসেছে ঘন কুয়াশার সাথে। অনেকেই প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উত্তরের জেলাগুলোতে ঘুরতে যাচ্ছে শীতকালেই। কেন শীতকাল? এর উত্তর নিশ্চয়ই আগেই পেয়ে গেছো৷ এবারে কথা বলি, উত্তরের কয়েকটি জেলা নিয়ে যেখানে গেলে দেখতে পারবে নানান শীতকালীন দৃশ্য ও অনুভব করতে পারবে যথার্থ একটা শীত মৌসুমের। এবং জানিয়ে দিব কিভাবে যাবে জেলাগুলোতে।

রংপুর
একদম সহজ করে বললে, রংপুর উত্তরের বিভাগীয় জেলা যেখানে যাওয়ার জন্য তোমাকে রাজধানীর গাবতলী, আব্দুল্লাহপুর, মহাখালীসহ নানান বাসস্ট্যান্ড থেকে সহজেই টিকেট করে যেতে পারবে। আবার চাইলে ট্রেনেও ভ্রমণ করতে পারো। অথবা যেতে পারবে সৈয়দপুরগামী উড়োজাহাজেও। বাস দিয়ে রংপুরের পথে যাত্রা হওয়ার পরই পাবে শীতকালীন একটু ঝাপটা ও অনুভূতি। জার্নি বাড়ার সাথে সাথেই শীতলতা আকড়ে ধরতে থাকে। বাসে রংপুরের মডার্ন অথবা কামারপাড়া নামিয়ে দিবে তারপর থেকে রিক্সা, অটোরিকশা বা অন্যান্য যানে ঘুরতে পারবে রংপুরের বিভিন্ন জায়গা। শীতে রংপুরে পাওয়া যায় সকাল বেলা ঘন কুয়াশায় খেজুরের রস। আবার ভাওয়াইয়া গানের এ শহরে দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ী, তাজহাট জমিদার বাড়ী, বেগম রোকেয়ার বাড়ি, লালদিঘি নয় গম্বুজ মসজিদ, ভিন্নজগত কিংবা চিকলি ওয়াটারপার্ক। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কারমাইকেল কলেজের মনোরম রাস্তাগুলোতে ভোর বেলার কুয়াশা মোহিত করবে যে কাউকে৷

কুড়িগ্রাম
রংপুর নেমে কিংবা সরাসরি কুড়িগ্রামের বাসে করেও যাওয়া যায় কুড়িগ্রামে। শীতকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুরে ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ের যে অপরূপ সৌন্দর্য তা ভোলার মত নয় যে কারও কাছেই। কনকনে শীতে সকাল বেলা গ্রামের মানুষের পানি নেয়া, গরু, মহিষ চড়ানো যে কাউকে মুগ্ধ করবে শীত ও দৃশ্যের কারণে। এছাড়া নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি, চান্দামারী মসজিদ, ভেতরবন্দর জমিদার বাড়ি, মুন্সিবাড়ি, সোনাহাট ব্রিজ, রমনা ঘাটের সৌন্দর্য তোমার শীতের অনুভূতিকে করবে আরো রোমাঞ্চকর। রংপুর থেকে বাসে ভাড়া পড়বে মাত্র ১০০-১২০ টাকা।

লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের নাম মাথায় আসলেই প্রথম আসবে তিস্তা নদীর নাম। এখানে নির্মিত তিস্তাব্রিজের পাড়ের যে অপরূপ সৌন্দর্য, অল্প পানি আর বালুময় পাড় যেন শীতকালে হয়ে ওঠে এক স্বর্গীয় দৃশ্যের মত। এখানে পাটগ্রাম উপজেলায় আবার রয়েছে তিনবিঘা করিডর, এ শীতে শীতের অনুভূতি আর ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে আসতো পারো খুব সহজেই। রংপুর থেকে মাত্র ২ ঘন্টায় পৌঁছাতে পারবে তোমার গন্তব্যে।

দিনাজপুর
দিনাজপুরকে অনেক মানুষ শুধুমাত্র লিচুর জন্যই বেশি মনে রাখে। লিচুর জন্য বিখ্যাত হলেও শীত মৌসুম কাটানোর জন্য দিনাজপুর হতে পারে অন্যতম পছন্দের এক জায়গা। এই ভুখন্ডের অন্যতম প্রাচীন শহর হলো দিনাজপুর যেখানে শীত ছুঁইয়ে যায় নতুনভাবে। দিনাজপুরের কান্তজির মন্দির, রাজবাড়ি, নয়াবাদ মসজিদ, দীপশিখা আনন্দালয়, রামসাগর, সুখসাগর, স্বপ্নপুরী এবং শতশত লিচু বাগান। শীতের মৌসুমে আলু তোলার ঢল নামে এ জেলাতেও।

পঞ্চগড়
কাঞ্চনজঙ্ঘার নাম মনে আসলে অনেকেরই বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের নাম মাথায় ঘুরে। এ জেলায় শীতকালে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। জেলার তেতুলিয়া ডাকবাংলোতে বসেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। এ জেলায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, সমতল চা বাগান, কাজি এন্ড কাজি রিসোর্ট, বার আউলিয়ার মাজার, গোলকধাম মন্দির, মহারাজার দিঘীসহ নানা ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এ জেলার শীত। শীতকালে এখানে হাড়কাপানো শীতে অনেককেই একেবারে নুইয়ে ফেলে। ইন্টারেস্টিং জিনিসের মধ্যে আছে দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর যা পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ক্যাম্পাসে রয়েছে।

এখন কথা হচ্ছে সবগুলোতে যাবে কিভাবে থাকবে কোথায়?
এরজন্য আগেই বলেছি কিভাবে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বা অন্য পন্থায় যেতে হবে। এছাড়াও যদি রংপুর গিয়ে তারপর অন্যান্য জেলায় যেতে চাও সেক্ষেত্রে কুড়িগ্রামে বাসে যেতে লাগবে সর্বোচ্চ ১২০টাকা, লালমনিরহাটে ১০০ টাকা, নীলফামারি ১০০ টাকা, দিনাজপুর ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পঞ্চগড় যেতে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ টাকা লাগবে। আর থাকার যায়গা নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা নেই। এক্ষেত্রে জেলা ডাকবাংলো, রিসোর্ট কিংবা ছোট বড় কিছু হোটেল আছে যা খুব সহজেই বুকিং করা যাবে।
এবারের শীতে উত্তরবঙ্গ হতে পারে তোমার সেরা পছন্দের একটা। শীতের অনুভূতি নিতে ও ঐতিহাসিক নিদর্শন একসাথে দেখতে ঘুরে আসো উত্তরবঙ্গে। আর মনে রাখবে এ অঞ্চলে বহু মানুষ এখনও হাড় কাঁপানো শীতে কষ্ট করে জীবন কাটাচ্ছে। চাইলে তাদের অনুভুতিগুলোও এক্সপেরিমেন্ট করতে পারো।