

পশ্চিম সুদানের দারফুরে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরএসএফ (র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স)’এর দখলের পর মানবিক সংকট ক্রমশ গভীর হচ্ছে। দেশটির উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশার ও আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পিছু হটছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ২৬ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখল করার পর থেকে অন্তত ৮১,৮১৭ জন মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। অধিকাংশই পায়ে হেঁটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বের হয়েছেন। এই দখল ঘটার আগে এল-ফাশার ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ ছিল। পরে আরএসএফ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলে সুদানের সেনাবাহিনী বিতাড়িত হয়।
অনেক বাস্তুচ্যুত মানুষ শহরের বিভিন্ন অংশে ও পাশের শহর তাওইলায় আশ্রয় নিয়েছেন। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দখলের পর থেকে শহরের ভেতরেই সহস্রাধিক মানুষ নিহত হতে পারে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো নিশ্চিত তথ্য দিয়ে বলেছে, আরএসএফ বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যাপক হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং অপহরণসহ মুক্তিপণের জন্য আটক রাখার মতো অপরাধ সংঘটিত করেছে।
এদিকে দুর্ভিক্ষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিটি এলাকাজুড়েই। নিরাপদ পানির অভাব, কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের প্রকোপ বেড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সুদান বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক ও বাস্তুচ্যুতি সংকটের মুখে পড়েছে। দেশের ১৮টি রাজ্যের অন্তত ১৮৫টি উপজেলায় ছড়িয়ে থাকা ১০,৯২৯টি স্থানে মোট ৯৫ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতি হয়েছে, দক্ষিণ দারফুরে যা সংখ্যায় প্রায় ১৮ লাখ ৪০ হাজার, উত্তর দারফুরে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, মধ্য দারফুরে, ৯ লাখ ৭৮ হাজার। এদের অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ৫১ শতাংশই শিশু।
সুদানের গৃহযুদ্ধ ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল শুরু হয়। সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ চলার সময় উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে দারফুরে আরএসএফের কর্মকাণ্ডকে জাতিসংঘ “গণহত্যার সম্ভাব্য ইঙ্গিত” হিসেবে উল্লেখ করেছে।
জানা যায়, দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুতদের বাইরে আরও ৪৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশে পালিয়েছে। ফলে মোট বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ, যা সুদানের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
শরণার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছেন মিসরে, দেশটিতে প্রায় ১৫ লাখ, দক্ষিণ সুদানে ১২ লাখ ৫০ হাজার ও চাদে ১২ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সুদানি নাগরিক, বাকি ৩০ শতাংশ অন্য দেশের নাগরিক।
জাতিসংঘের এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ এলাকা ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ, মানবিক কর্মীদের প্রবেশে বাধা এবং গণহত্যার আশঙ্কা প্রবল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ও রেড ক্রস জানিয়েছে, সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে দেশটিতে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুদানের গৃহযুদ্ধ এখন কেবল এক দেশের রাজনৈতিক সমস্যা নয়, বরং মানবতার বিরুদ্ধে এক নির্মম বিপর্যয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকটের অবসান প্রায় অসম্ভব।
মূল লেখাঃ আলজাজিরা
অনুবাদকঃ মোঃ মুজাহিদুর রহমান