

স্বপ্ন, সংগ্রাম আর পরিবর্তনের প্রত্যাশা এগুলোই আজকের তরুণ প্রজন্মের মূল শক্তি। আমি তাদেরই একজন।
আমার নাম নাইম সিকদার, বয়স ২২ আমি একজন তরুণ, তবে আমার স্বপ্ন অসাধারণ একটি সুন্দর, সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ।
২০২৪ সালের নির্বাচন অভিজ্ঞতা
জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। তখন আমার বয়স ছিল ২১। সেদিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আমি হতাশ হয়েছিলাম। আমার ভোট হয়তো আগেই দিয়ে ফেলা হয়েছিল অথবা আমার মতো অনেক তরুণই মনে করেছিল, সেখানে যোগ্য প্রার্থী নেই। তাই অনেকে ভোট দেননি। আমিও মনে করেছিলাম, যেই প্রার্থীদের মধ্যে থেকে পছন্দের ব্যাক্তিদের বেছে নিতে বলা হচ্ছে তারা আমার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে আমি শঙ্কিত। এই অভিজ্ঞতা আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়েছে ভোটাধিকার কি শুধু কাগজে থাকবে, নাকি সত্যিই মানুষ নিজের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবে?
তরুণদের শক্তি ও নেতৃত্ব
২০২৪ সালে আমি দেখেছি তরুণদের অসাধারণ শক্তি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু একটি দাবি আদায়ের আন্দোলন ছিল না, এটি ছিল তরুণদের নেতৃত্ব, সংগ্রাম ও ঐক্যের প্রতীক। ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনকে চ্যালেঞ্জ করে ছাত্র সমাজ দেখিয়েছে, তারাই পারে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হতে। এই নেতৃত্ব আমাদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে আশা জাগিয়েছে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রের।
আমি কেমন দেশ চাই
আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ, যেখানে শান্তি, সাম্য আর মানবাধিকার নিশ্চিত থাকবে। নারী ও শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। কোনো মানুষ অধিকার বঞ্চিত হবে না। আমি এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে ঘুষ, রাজনৈতিক দলের অপব্যবহার, নারী-শিশু নির্যাতন কিংবা বৈষম্যের কোনো জায়গা থাকবে না। প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেককে সম্মান করবে। আমি চাই একটি স্বাধীন, মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র, যেখানে সরকারের পরিবর্তনে মানুষের মৌলিক অধিকার পরিবর্তিত হবে না। নির্বাচনকালীন সময়ে এক ধরনের আচরণ আর নির্বাচনের পরে অন্য ধরনের আচরণ আমি আর দেখতে চাই না।
আমার প্রত্যাশা
আমি বিশ্বাস করি ২০২৬ সালের নির্বাচন হবে সুস্থ ও সুন্দর একটি নির্বাচন। যে সরকারই আসুক না কেন, সেই সরকারকে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে। আমার কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিতে হবে। তরুণদের মত প্রকাশের অধিকার রক্ষা করতে হবে। আমি চাই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, সবার জন্য আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ সড়ক, উন্নত ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ, আর বিশ্বমানের ক্রীড়াঙ্গন। সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটানোর।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে তরুণদের অবস্থানএকটা বিষয় স্পষ্ট আমরা তরুণ সমাজ আর কোনো নিপীড়ন, শোষণ, অন্যায় সহ্য করব না। ২০২৬ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো অন্যায়, জুলুম, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের চেষ্টা হলে তরুণরাই হবে তার বিরুদ্ধে প্রথম কণ্ঠস্বর।
উপসংহার
আমি চাই না ক্ষমতার দম্ভে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ভেঙে যাক। আমি চাই না নির্বাচনের নামে নিপীড়ন-অত্যাচার ঘটুক। আমি চাই এমন এক নির্বাচন যেখানে প্রতিটি ভোটার নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে, প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে, আর প্রতিটি তরুণ তার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাবে।
২০২৬ সালের নির্বাচন শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগ নয়, এটি তরুণদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার। তাই আমার প্রত্যাশা, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাকে অবশ্যই হতে হবে মানবিক, দায়বদ্ধ ও তরুণবান্ধব।